Cyber Nirapotta: আপনার অনলাইন নিরাপত্তার নির্দেশিকা

আপনি বইয়ের প্রতিটি সফল অর্ডারের মাধ্যমে পাচ্ছেন:
বইটির বর্তমান সংস্করণ।
বইটির লাইফটাইম আপডেট সংস্করণ।
প্রাইভেট গ্রুপের মাধ্যমে এক বছরের জন্য সাইবার সিকিউরিটি সহায়তা।
২য় সংস্করণ
© কপিরাইট ২০২৫, লেখকঃ তানজিম আল ফাহিম
প্রকাশকঃ এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি
ইবুকটির সব ধরনের স্বত্ব সংরক্ষিত।

এ বইয়ের কোনো অংশ (লেখা, নকশা, ছবি কিংবা যেকোনো কনটেন্ট) পূর্বানুমতি ছাড়া অনুলিপি, পুনর্মুদ্রণ, অনুবাদ, পরিবর্ধন বা ইলেকট্রনিক ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা আইনত দণ্ডনীয়।
এই ইবুকটি নির্ধারিত প্লাটফর্ম থেকে ক্রয় করে ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য, এবং অ-বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে এমন অনুমতি সাপেক্ষে অনলাইন বা অফলাইনে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেকোনো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই প্রকাশকের লিখিত অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
যদি আপনার মনে হয় এই ইবুকের কোনো অংশ অন্য কোথাও থেকে অনুমতিহীনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বা কপিরাইট লঙ্ঘিত হয়েছে, অনুগ্রহ করে সাথে লেখক কিংবা প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন।


প্রকাশক: এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি
বি/১, প্রধান সড়ক, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা – ১২১৯
[email protected]
লেখকের কথা
সাইবার সিকিউরিটি এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং—এই দুই ক্ষেত্রেই আমি তানজিম আল ফাহিম, বিগত ১৪ বছর ধরে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা জগতের বিকাশে আমি সক্রিয় ভূমিকা পালন করার তাগিদে প্রতিষ্ঠা করেছি দেশের প্রথম বাণিজ্যিক সাইবার নিরাপত্তা একাডেমি এবং প্রতিষ্ঠান “এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি”। এছাড়া, বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ এবং একমাত্র সক্রিয় ইথিক্যাল হ্যাকার কমিউনিটি “সাইবার ৭১” এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে কাজ করছি।
তানজিম আল ফাহিম
সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ এবং ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী কাজ করার অপার সম্ভাবনা থাকায় ২০১২ সাল থেকে “এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি”র মাধ্যমে ইতিমধ্যেই অর্ধ শতাধিক ব্যাচে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার অধীনে শিক্ষার্থীরা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে ফ্রিল্যান্সার সহ দেশ কিংবা দেশের বাইরে সাইবার সিকিউরিটির বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইথিক্যাল হ্যাকিং সেক্টরে কাজ করা বাংলাদেশি সবাই “এরিনা ওয়েব সিকিউরিটির শিক্ষার্থী।
এছাড়াও সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে বুয়েট, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, আইসিটি মন্ত্রণালয় সহ শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে। প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাজ করার মাধ্যমে আমি দেখেছি, প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাইবার সিকিউরিটি শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার জ্ঞান হিসেবে নয়, বরং আপনার অনলাইনে জগতে নিরাপদ থাকার জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই ই-বুকটি সর্বস্তরের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চয়তার লক্ষে সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। পাশাপাশি, আনলিমিটেড আপডেট আপনি পেয়ে যাবেন, যাতে নতুন কোনো সাইবার আক্রমণ এর ঝুঁকি সৃষ্টি হলেও এই বইটির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে আপনি নিরাপদ থাকতে পারেন।
আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে চেষ্টা করেছি সাইবার নিরাপত্তা ও ইথিক্যাল হ্যাকিং সম্পর্কিত আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সহজ, প্রাঞ্জল ভাষায় আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। এই ই-বুকটি সেই প্রচেষ্টারই একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা, যেখানে আমার জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে একটি নিরাপদ ভার্চুয়াল জগত গড়ে তোলার আশা করছি।
ই-বুকটি নিজে পড়ুন, যদি আপনার উপকারে আসে অন্যদেরকেও পড়ার জন্য উৎসাহ দিন। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করছি এই ই-বুক আপনার সাইবার সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং ভবিষ্যৎ অনলাইন জীবনযাত্রায় আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিবে।
বইটি কাদের জন্য লেখা?
এই বইটি লেখা হয়েছে সর্বস্তরের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য, যারা সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান।
আপনি আইটি সেক্টরে কাজ করেন কিংবা না করেন, বইটি আপনিসহ সকলের জন্যই উপকারী। কারণ আজকের ডিজিটাল যুগে আপনি আমি আমরা সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করি। অনলাইনে দৈনন্দিন কাজ করা থেকে শুরু করে, শিক্ষা নেওয়া, বিনোদন উপভোগ করা কিংবা পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখা - সবকিছুই এখনকার সময় অনলাইনে সম্পন্ন হয়। এর ফলে আমাদের দিনে দিনে যেমন অনলাইনের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তদ্রূপ সেই সাথে সাইবার হুমকি এবং অনলাইন নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিও ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
এই বইটি পড়লে আপনি যা জানতে পারবেন:
১. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: কিভাবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ছবি, পাসওয়ার্ড, ফোন নাম্বার, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবলী নিরাপদে রাখা যায়।
২. পরিবারের সুরক্ষা: আপনার পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে শিশুদের অনলাইনে নিরাপদ রাখার উপায়।
৩. প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা: যদি আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানের তথ্য কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় সেই সম্পর্কিত জ্ঞান।
৪. সাইবার সচেতনতা: বিভিন্ন ধরনের সাইবার হুমকি ও অপরাধ সম্পর্কে জানবেন এবং সেগুলো থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবেন।
৫. টেকনোলজির সাথে তাল মিলানো: দ্রুত পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে নিজেকে আপডেট রাখতে এবং নতুন সাইবার হুমকি মোকাবিলার কৌশল ও সঠিক দিক নির্দেশনা।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু আইটি পেশাজীবীদের জন্য নয়, বরং এটি আমাদের সকলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই বইটি আপনাকে এবং আপনার আশেপাশের মানুষকে একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশে জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে। অনলাইন নিরাপত্তা ঝুঁকির এই যুগে, সচেতনতা এবং সঠিক জ্ঞানই আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী বর্ম।
তাই বইয়ের প্রতিটি পাতা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং আপনার পরিবারের ও প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। একই সাথে একটি সুন্দর, সুরক্ষিত ও নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন। আশা করি, এই বইটি আপনার সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে এবং আপনাকে সঠিক পথের দিশা দেখাবে।
সূচীপত্র




সাইবার ক্রাইম ও এর ভয়াবহতা
সাইবার ক্রাইম কী?
সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ হলো কম্পিউটার, ইন্টারনেট বা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে করা অপরাধ। এটি এমন এক অনৈতিক কর্মকান্ড যা আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের কিংবা আর্থিক অবস্থার ক্ষতি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: কেউ যদি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে হেনস্তা বা অপব্যবহার করে, অথবা আর্থিক জালিয়াতি করে, তাহলে তা সাইবার অপরাধের মধ্যে পড়ে।
আজকের দিনে সাইবার ক্রাইম শুধু আইটি (IT) সেক্টরেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, অনলাইন শপিং, শিক্ষা ব্যবস্থা সহ এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে হর হামেশাই সাইবার অপরাধ ঘটে চলেছে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অপরাধীরা আমাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিচ্ছে, যার ফলে নিজে এবং সকলের সুরক্ষার জন্য আমাদের সাইবার সিকিউরিটির জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

সাইবার ক্রাইমের মূল লক্ষ্য
  • ব্যক্তিঃ ব্যক্তিগত তথ্য চুরি কিংবা অপব্যবহার ।
  • প্রতিষ্ঠানঃ গুরুত্বপূর্ণ ডাটাবেস কিংবা সিস্টেম অথবা প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে অননুমোদিত প্রবেশ।
  • রাষ্ট্রঃ সরকারি ডেটা কিংবা অতি প্রয়োজনীয় অনলাইন অবকাঠামোতে আক্রমণ।

কেনো অনলাইন ব্যবহারকারীদের জন্য সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ?
আজকের ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট ভিত্তিক কার্যক্রম আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা অনলাইনে ব্যাংকিং সেবা থেকে শুরু করে, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন শপিং, শিক্ষা এবং অন্যান্য অনেক কাজের সুবিধা নিয়ে থাকি। এইসব অনলাইন কার্যক্রমের সাথে সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্বও ক্রমেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এখানে গুরুত্ব সহকারে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা
অনলাইনে আমরা অনেক ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করি। যেমন নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি। যদি এই তথ্যগুলো সাইবার অপরাধীদের হাতে পড়ে, তাহলে তারা আপনার তথ্য ব্যবহার করে ক্ষতি করতে পারে। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখা যায়, যেমন শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, দুই ধাপের নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) চালু করা ইত্যাদি।
আর্থিক নিরাপত্তা
অনলাইন ব্যাংকিং এবং অনলাইন শপিং আমাদের আর্থিক লেনদেন সহজ করেছে, কিন্তু এর সাথে সাথে ফিশিং, স্ক্যাম ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত সাইবার অপরাধের ঝুঁকি বেড়েছে। সাইবার নিরাপত্তার জ্ঞান থাকলে আপনি জানবেন কিভাবে নিরাপদে অনলাইনে অর্থ লেনদেন করবেন এবং প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন।
সামাজিক নিরাপত্তা
সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা অনেক সময় ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য জানার ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধীদের জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করে। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে জানলে আপনি জানবেন কিভাবে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল সুরক্ষিত রাখা যায়, যেমন প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক করা, অজানা ব্যক্তিদের সাথে সংযোগ সীমিত রাখা ইত্যাদি।
পেশাগত নিরাপত্তা
কর্মক্ষেত্রে সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় কর্মীরা যদি সাইবার সিকিউরিটির প্রতি সচেতন না হন, তাহলে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান থাকলে কর্মীরা সহজেই সাইবার হুমকি চিনতে এবং সংস্থাকে রক্ষা করতে পারবেন।
ডিজিটাল নাগরিকত্ব
অনলাইনে সঠিকভাবে আচরণ করা এবং সাইবার নীতিমালা মেনে চলা ডিজিটাল নাগরিকত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান থাকলে আপনি নিজেকে এবং আপনার আশেপাশের মানুষকে সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারবেন, যেমন নিরাপদ ব্রাউজিং, সম্মানজনক আচরণ করা ইত্যাদি।

আইনগত সচেতনতা
সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে এর জন্য প্রথমে অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা থাকা দরকার। সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কিত জ্ঞান থাকলে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে হয় এবং আইনগত পদক্ষেপ নিতে হয়।
প্রযুক্তির সাথে তাল মিলানো
প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং নতুন নতুন সাইবার হুমকি আসছে। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আপডেট থাকলে আপনি এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন এবং নতুন হুমকির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকবেন।
আমরা কোথায় আমাদের তথ্য ফেলে রেখে আসি?
আজকের ডিজিটাল যুগে, আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের তথ্য তৈরি এবং শেয়ার করি। এই তথ্যগুলি বিভিন্ন জায়গায় সংরক্ষিত থাকে, যা সাইবার অপরাধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। আসুন দেখি আমরা সাধারণত কোথায় কোথায় আমাদের তথ্য ফেলে রেখে থাকি এবং সেগুলো কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়।
গুগলঃ
গুগলে আমরা সব সময় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অনুমতি আমরা আমাদের অজান্তেই দিয়ে থাকি। যেমন, আপনি যদি আপনার ব্রাউজার থেকে photos.google.com এ প্রবেশ করেন আপনি দেখতে পাবেন আপনার মোবাইলের সকল ব্যক্তিগত ছবি এখানে আপলোড হয়ে আছে। এবার ধরুন হ্যাকার কোন এক প্রক্রিয়াতে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট এর এক্সেস নিল! এখন স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে সে আপনার মোবাইল ফোনে থাকা ব্যক্তিগত সকল ছবি গুলো তার ডিভাইস থেকে দেখতে এবং ডাউনলোড করে নিতে পারবে। যা খুবই বিব্রতকর একটি অবস্থা।
এবার আসা যাক passwords.google.com এ গেলে আপনি দেখতে পাবেন আপনার সকল পাসওয়ার্ড গুলো এখানে আপলোড হয়ে আছে। তার মানে হ্যাকার কোন ভাবে আপনার ইমেইলটি হ্যাক করলে আপনার ব্যাংক সহ আপনার ব্যবহার করা সকল আইডি পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবে।
আবার আপনি কখনো myactivity.google.com এ গেলে দেখতে পাবেন আপনি গত বছর ঠিক এই দিনে কোথায় অবস্থান করেছিলেন, সেখান থেকে কোথায় গিয়েছিলেন তা পিন পয়েন্ট গুগল ম্যাপ ডেস্টিনেশন সহ বিস্তারিত সকল তথ্য! অনেক ভয়ংকর বিষয়, তাই না?
কেস স্টাডি: রাবেয়ার গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাক এবং ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস!
পরিস্থিতি
রাবেয়া নিজের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সবসময়ই গুগল অ্যাকাউন্ট লগইন করে রাখতেন। ফোনে যেকোনো ছবি তুললেই অটোমেটিকালি সেটি photos.google.com এ সিঙ্ক হত। তিনি আরও অনেক ওয়েবসাইটে লগইন করার সময় পাসওয়ার্ডগুলো ব্রাউজারের মাধ্যমে সেভ করে রাখতেন, ফলে সেগুলো passwords.google.com এ জমা থাকত। এদিকে তিনি জানতেন না, myactivity.google.com এ তার অবস্থান, সার্চ হিস্টোরি, অ্যাপ ব্যবহারের ডেটা—সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে।
হঠাৎ একদিন তার এক পরিচিত বন্ধু অবাক হয়ে ফোন করে জানায়, রাবেয়ার নামে হুবহু একই প্রোফাইল পিকচার দিয়ে কেউ ফেসবুক প্রোফাইল চালাচ্ছে, যেখানে আরও কিছু ব্যক্তিগত ছবি আপলোড করা হয়েছে। বন্ধু এ সম্পর্কিত লিংক শেয়ার করলে, রাবেয়া শিউরে ওঠেন—এগুলো তার একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, যেগুলো ফোনে তোলা হয়েছিল এবং কখনো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয়নি।
কীভাবে হ্যাক হলো?
রাবেয়ার গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলো। এবার গুগল অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস নেওয়ার পর হ্যাকাররা —
  • photos.google.com-এ গিয়ে তার ফোনে থাকা সব ছবি ডাউনলোড করে নেয়।
  • passwords.google.com-এ গিয়ে ব্রাউজারে সেভ করা অন্যান্য ওয়েবসাইট/সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড পেয়ে যায়।
  • myactivity.google.com থেকে রাবেয়ার লোকেশন, সার্চ হিস্টোরি, প্লেস ভিজিট সবকিছু জেনে নেয়।
এই ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে হ্যাকার তার পরিচয়ে ফেক প্রোফাইল তৈরি করে ফেসবুকে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।
কি ধরনের ক্ষতি হলো
ব্যক্তিগত ছবির অপব্যবহার: তার একান্ত ব্যক্তিগত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে রাবেয়াকে সামাজিকভাবে বিব্রত ও হেয় করা হয়।
অ্যাকাউন্টগুলোতে অনধিকার প্রবেশ: গুগল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাওয়ায় হ্যাকার একইসাথে তার অন্যান্য ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে সহজেই ঢুকে পড়ে (কারণ একই বা সেভ করা পাসওয়ার্ড)।
আরও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা: ব্যাংক বা অন্যান্য অনলাইন ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঢুকে টাকা সরিয়ে নেওয়া বা জালিয়াতির চেষ্টা করতে পারত।
মানসিক চাপ: ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ায় রাবেয়া ভীষণ মানসিক চাপে পড়ে যান।
পরবর্তী পদক্ষেপে কী করলেন
ফোন ও গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে সব ডিভাইস লগআউট: অন্য ডিভাইস থেকে গুগল অ্যাকাউন্টে ঢুকে পড়া অবস্থানগুলো (Where you’re signed in) খুঁজে বের করে সেগুলোতে লগআউট করে দিলেন।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও 2FA চালু: গুগল অ্যাকাউন্টসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও স্পেশাল ক্যারেক্টার মিশিয়ে আলাদা পাসওয়ার্ড রাখেন এবং দুই-স্তরের নিরাপত্তা (2FA) চালু করেন।
photos.google.compasswords.google.com পুনর্মূল্যায়ন:
  • প্রয়োজনীয় নয় এমন পুরাতন ছবি ডিলিট করেন, অথবা ব্যক্তিগত যেগুলো একান্তই রাখতে চান, সেগুলো এনক্রিপ্টেড আকারে অন্য কোথাও সংরক্ষণ করেন।
  • পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি ও সংরক্ষণ করেন, যাতে গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলেও অন্য অ্যাকাউন্টগুলো এক্ষেত্রে রক্ষা পায়।
myactivity.google.com-এর ডেটা পরিস্কার: পুরনো লোকেশন, সার্চ হিস্টোরি মুছে ডিফল্ট সেটিংস বদলে ডেটা সেভ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেন।
এরিনা ওয়েব সিকিউরিটির গ্রুপ থেকে সহায়তাঃ
  • “সাইবার নিরাপত্তা: আপনার অনলাইন নিরাপত্তার নির্দেশিকা” বইটি অর্ডার করার পর রাবেয়াকে একটি প্রাইভেট গ্রুপে এড করে নেওয়া হয়েছিলো। সেখান থেকে সাহায্য নিয়ে রাবেয়া তার গুগল অ্যাকাউন্টটি রিকভার এবং সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  • ফেসবুকে ফেক প্রোফাইল ও আপত্তিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে প্রোফাইল বন্ধ করানোর চেষ্টা করেন।
  • বন্ধু ও পরিচিতদের বলে দেন, কেউ যেন তার নামে অন্য প্রোফাইল দেখে বিভ্রান্ত না হন।
শিক্ষণীয় দিক
  • দুর্বল পাসওয়ার্ড: নাম বা জন্মতারিখ ইত্যাদি সহজে অনুমেয় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়।
  • একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
  • গুগলের বিভিন্ন সেবায় (photos, passwords, myactivity) কী ধরনের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ হয়, তা না জানা বিশাল ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
  • নিয়মিত আইটি সুরক্ষা চর্চা যেমন পাসওয়ার্ড বদলানো, 2FA, ডিভাইস লগইন হিস্টোরি রিভিউ—এসব করা প্রয়োজন।
  • ব্যক্তিগত জীবন ও ইমেইল অ্যাকাউন্টের যথেষ্ট সচেতনতা না রাখলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

সম্পর্কিত পরামর্শ:
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড: বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা, স্পেশাল ক্যারেক্টার—সর্বনিম্ন ১২-১৫ ডিজিটের মিশ্রণে পাসওয়ার্ড তৈরি করা।
2FA চালু করা: গুগলের জিমেইল একাউন্টের পাশাপাশি ব্যাংকিং বা সোশ্যাল মিডিয়া সবকিছুতেই দুই-স্তরের সুরক্ষা বা OTP চালু করে রাখা।
Privacy Checkup: গুগলের Privacy Checkup ফিচার ব্যবহার করে কী কী ডেটা স্টোর হচ্ছে, সেটি নিয়মিত আপডেট করা।
অ্যাকাউন্ট রিকভারি ইনফো হালনাগাদ রাখা: পুনরুদ্ধার ইমেল ও ফোন নম্বর সঠিকভাবে বসিয়ে রাখলে অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়া সহজ হয়।
শেয়ার্ড বা পাবলিক কম্পিউটার ব্যবহার করলে: লগআউট করে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, পাশাপাশি ব্রাউজার ব্যবহার করলে সব সময় ইনকগনেটো মোড অথবা গেস্ট ইউজার হিসেবে ব্রাউজ করা।
আমরা আরো যেখানে তথ্য ফেলে রেখে আসিঃ
ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস
গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স, মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভ ইত্যাদি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসে আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ফাইল সংরক্ষণ করি।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডইন ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আমরা আমাদের ছবি, ভিডিও, ব্যক্তিগত মেসেজ এবং অবস্থান শেয়ার করি।
ইমেইল সার্ভিস
জিমেইল, ইয়াহু, হটমেইল ইত্যাদি ইমেইল সার্ভিসে আমাদের যোগাযোগের মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য জমা থাকে। ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হলে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত তথ্য শেয়ার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অনলাইন ব্যাংকিং ও ফিনান্সিয়াল সার্ভিস
অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ, বিকাশ সহ বিভিন্ন দেশি বিদেশি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে আমরা আমাদের আর্থিক তথ্য জমা রাখি। এই তথ্যের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরাসরি আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন
বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসবের ভেতর থেকে কিছু অ্যাপ্লিকেশন নিয়মিতভাবে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে, যা কখনও আমাদের অজান্তেই ঘটে!
ওয়েবসাইট ও অনলাইন ফর্ম
আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করি, অনলাইন ফর্ম পূরণ করি এবং তথ্য জমা রাখি। এই তথ্যগুলি যদি সুরক্ষিত না হয়, তাহলে তা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আমাদের তথ্য জমা রাখি। এই তথ্যগুলি সুরক্ষিত না থাকলে সাইবার অপরাধীরা সহজেই তা ব্যবহার করে ক্ষতি করতে পারে। তাই, আমাদের উচিত সচেতন হওয়া এবং আমাদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ আমাদের ডিজিটাল জীবনকে নিরাপদ রাখবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে সাধারণত যে ধরনের সাইবার ক্রাইম হয়ঃ বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইমের ব্যাপ্তি দিন দিন বেড়ে চলেছে। নানা ধরনের মানুষ—ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্র, সাধারণ চাকরিজীবী বা উদীয়মান উদ্যোক্তা—সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন প্রায়শই। দেশের সর্ব বৃহৎ ও একমাত্র সক্রিয় সাইবার সিকিউরিটি কমিউনিটি “সাইবার ৭১” এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রতিদিন আমাদের কাছে গড়ে শতাধিক সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অভিযোগ বা তথ্য আসে। এর বেশির ভাগই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক, মোবাইল ফোনে স্পাই অ্যাপ ইনস্টল, অনলাইন পেমেন্ট জালিয়াতি, স্ক্যাম ইত্যাদি নিয়ে। এই বইয়ে আমরা বাস্তবে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ধরণ এবং সেই সঙ্গে কীভাবে এইসব আক্রমণ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে তা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করেছি।
নিম্নে এমন সাতটি প্রধান সাইবার আক্রমণের ধরন বর্ণনা করা হলো যা আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটে থাকে। প্রতিটি আক্রমণের পেছনে অপরাধীদের কী ধরনের প্রলোভন, সাইকোলজিক্যাল ট্রিকস ও প্রযুক্তিগত কৌশল থাকে, তার ব্যাখ্যাও যুক্ত করা হয়েছে। এখানে সমাধান বা প্রতিরোধের উপায় উল্লেখ না করে, বরং আক্রমণের পদ্ধতিকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে।
ফিশিং আক্রমণের মাধ্যমে ফেসবুক কিংবা ইমেইল হ্যাক
আক্রমণের সাধারণ রূপরেখা: ফিশিং বলতে আমরা সাধারণত বুঝি, ভুয়া ওয়েবসাইট, ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে সংবেদনশীল তথ্য (ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড, OTP ইত্যাদি) হাতিয়ে নেওয়া। এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি হ্যাকিং পদ্ধতি। অনেক সময় ফিশিং সাইট এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যা দেখতে হুবহু ফেসবুক বা জিমেইলের লগইন পেজের মতো লাগে। ব্যবহারকারী বুঝতেই পারেন না যে তিনি একটি ভুয়া লিঙ্কে ঢুকেছেন। ফলে নিজের অ্যাকাউন্ট তথ্য দিলেই সেটি চলে যায় হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে।
ফিশিং-এর বিস্তার ও উদাহরণ:
বাংলাদেশে ফিশিং আক্রমণ সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ: ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢোকানোর জন্য হ্যাকাররা “ফেসবুক ইনভাইটেশন”, “ফেসবুক পাসওয়ার্ড রিসেট”, “ইভেন্ট প্রমোশন”, এমনকি কখনও কখনও “দরিদ্রদের সাহায্যের অনুরোধ” ইত্যাদি শিরোনামে লিঙ্ক পাঠায়। ব্যবহারকারী ওই লিঙ্কে ক্লিক করে লগইন করার চেষ্টা করলেই তাদের তথ্য চুরি হয়। ইমেইল ফিশিং-এ আবার নকল জিমেইল বা ইয়াহু লগইন পেজ পাঠিয়ে আকর্ষণীয় অফার (যেমন ফ্রি গিফট, লটারি জেতা) দেখানো হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এমন একটি ইমেইলের সাবজেক্ট বা প্রেরকের নাম বিশ্বাসযোগ্য হওয়ায় মানুষ ফাঁদে পা দেয়।
এভাবে ফিশিং আক্রমণের মাধ্যমে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করলে ব্যবহারকারীর মেসেজ, ছবি, ব্যক্তিগত যোগাযোগ তালিকা ইত্যাদি সবই অপরাধীদের হাতে চলে যায়। একই কৌশলে ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়াও খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিভিন্ন ফেক অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের মাধ্যমে মোবাইল হ্যাক
ভুয়া অ্যাপ তৈরির কৌশল
স্মার্টফোন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। অপরাধীরাও এটি কাজে লাগাচ্ছে ভুয়া বা ফেক অ্যাপ্লিকেশন তৈরির মাধ্যমে। অনেক সময় জনপ্রিয় গেম বা ইউটিলিটি অ্যাপের ক্লোন তৈরি করা হয়, যেখানে আসল অ্যাপের মতো আইকন ও নাম ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারকারী সেটি ইনস্টল করলে পেছনে একধরনের ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার সক্রিয় হয়ে যায়।
সোশ্যাল মিডিয়া বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ফেসবুক পোস্টে বা মেসেঞ্জার গ্রুপে "নতুন গেম ডাউনলোড করুন ও ৫০০ টাকা ফ্রি পান" বা "গোপন কল রেকর্ডার অ্যাপ" শিরোনামে লিঙ্ক দেওয়া হয়। অজানা উৎস থেকে এই অ্যাপগুলো ডাউনলোড করলেই ব্যবহারকারীর ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে। অপরাধীরা এরপর ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা এমনকি লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রেই নানা ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য চুরি হয়ে যায় এবং পরে সেগুলোকে ব্ল্যাকমেইলের কাজে ব্যবহার করা হয়।
বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুঁকি
প্রতিদিন আমাদের কাছে যে শতাধিক অভিযোগ আসে, তার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকে “অজানা অ্যাপ ডাউনলোড”-এর ফাঁদে পা দেওয়া মানুষের গল্প। তারা জানিয়েছেন, হঠাৎ দেখছেন ফোনের গ্যালারি গায়েব, পাসওয়ার্ড পাল্টে গেছে, কিংবা কেউ তাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট পড়তে পারছে।
ক্র্যাক সফটওয়্যার কিংবা টরেন্ট ফাইলের মাধ্যমে ডিভাইস / নেটওয়ার্ক হ্যাক
পাইরেটেড কনটেন্টের জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশে পাইরেটেড সফটওয়্যার, গেম এবং টরেন্ট ফাইল ডাউনলোডের প্রবণতা অনেক বেশি। বিশেষ করে দামি সফটওয়্যার কেনার সামর্থ্য না থাকায় বা না কিনে ব্যবহার করার অভ্যাসের কারণে অনেকে ক্র্যাক করা সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। তবে এই ক্র্যাক সফটওয়্যারগুলোতে কীভাবে ম্যালওয়্যার বা রিমোট অ্যাক্সেস ট্রোজান (RAT) যুক্ত করা আছে, তা ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন না।
টরেন্ট ফাইল ডাউনলোডের ফাঁদ
অনেকেই নতুন সিনেমা, সিরিজ বা গেম ডাউনলোড করতে টরেন্ট সাইট ব্যবহার করেন। এই সাইটগুলোতে থাকা ফাইলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। হ্যাকাররা খুব সহজেই কোনো জনপ্রিয় ফাইলের সাথে ম্যালওয়্যার জুড়ে দেয়। তারপর ব্যবহারকারী সেই ফাইল নামানোর সাথে সাথেই কম্পিউটার অথবা সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে একটি টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করায় পুরো অফিস নেটওয়ার্কের ওপর হামলা হয়েছে। ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে নানা গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ফাঁসের শিকার হয়েছে।

ব্যবহারকারীর অজান্তে পেছনে কাজ
ক্র্যাক সফটওয়্যার বা টরেন্ট ফাইল চালু করার সময় দেখা যায়, সাময়িকভাবে সফটওয়্যারটি ‘চলছে’ বলে মনে হয়।কিন্তু পেছনে একটি RAT বা কী-লগার বা অন্য কোনো ম্যালওয়্যার গোপনে ডেটা সংগ্রহ করতে থাকে। এতে ব্যক্তিগত কিংবা অফিসিয়াল পাসওয়ার্ড, ফাইল, ডকুমেন্ট—সবকিছু অজান্তে চলে যায় হ্যাকারদের হাতে।
প্রলোভন / সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ফেসবুক পেজ হ্যাক
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কীভাবে কাজ করে?
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মানে হলো মানুষের আচরণ ও মনস্তত্ত্বের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তথ্য বের করা। বাংলাদেশে ফেসবুক পেজ হ্যাকিংয়ের জন্য এটি অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে জনপ্রিয় পেজ বা ভেরিফাইড প্রোফাইলের ওপর হামলা চালাতে হ্যাকাররা নানা ধরনের ব্যবসায়িক প্রস্তাব নিয়ে সামনে আসে।
বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপের নামে প্রলোভন
নানা ভাবে ‘অনলাইন মার্কেটিং এজেন্সি’, ‘বিগ ব্র্যান্ড অ্যাড অফার’ ইত্যাদির নাম করে ফেসবুক পেজ মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে বলা হয়, “আপনার পেজে আমরা মাসে ২ লাখ টাকা দিবে, যদি আপনি আমাদেরকে বিজনেস ম্যানেজারে অ্যাক্সেস দেন।” অনেক পেজ মালিক বড় অঙ্কের আয়ের আশায় তাদেরকে এডমিন বা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ওই ম্যানেজার অ্যাক্সেস পেলেই পেজ হাতিয়ে নিয়ে মূল মালিককে ব্লক করে ফেলে।
কৌশলের বিভিন্ন স্তর
প্রথমে তারা ছোটখাটো প্রমাণ দেখাতে পারে (যেমন: ব্যাঙ্ক পে-স্লিপের স্ক্রিনশট, অন্য কোনো পেজের রেফারেন্স), যাতে ভিকটিম পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলে। এরপর ধীরে ধীরে পেজে “এডিটর/মডারেটর” হিসেবে ঢুকে পড়ে। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে মালিকের মালিকানা কেড়ে নেয়। এটি সম্পূর্ণভাবেই মানুষকে মগজ ধোলাই করা ও ভুয়া কাগজপত্র দেখানোর দ্বারা সম্ভব হয়।
প্রলোভনের মাধ্যমে ইনভেস্ট করানো
আয় ও লাভের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা হলো ‘অনলাইন ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম’। এর আওতায় হ্যাকার বা প্রতারকগোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়—“মাত্র ১০০০ টাকা ইনভেস্ট করে প্রতিদিন ২০০ টাকা আয় করুন”। প্রথম দিকে ২/১ বার সামান্য কিছু অর্থ (যেমন ১৫০ টাকা) প্রকৃতপক্ষে ফেরতও দেয়, যাতে মানুষ আস্থা পায়। এর পরবর্তী ধাপে ভিকটিমকে বলে, “আরো বেশি ইনভেস্ট করলে অনেক বেশি আয় হবে।”
প্রথমে কিছু নগদ ফেরত, পরে প্রতারণা
এ ধরনে প্রথমে সামান্য অর্থ ফেরত পাওয়ায় অনেকেই বড় অঙ্কের টাকা ইনভেস্ট করতে আগ্রহী হয়ে পড়েন। কিন্তু একবার বড় টাকা পেমেন্ট করে দিলেই প্রতারকরা আর রেসপন্স করে না, বা ভিকটিমকে ব্লক করে দেয়। অনেকেই সংসারের সঞ্চয় বা আত্মীয়দের কাছ থেকে নিয়ে বড় মাপের টাকা বিনিয়োগ করে শেষ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত হন।
অবাস্তব অফারের ধরণ
প্রতারকরা সাধারণত “অল্প পরিশ্রমে বেশি আয়”, “প্রতিদিন টাকা পেয়ে যাবেন”, “নিরাপদ প্ল্যাটফর্মে ইনভেস্ট”—এই রকম চটকদার বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে। রেফারেল লিংক বা পিরামিড স্কিমের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনকেও টেনে আনে। অবিশ্বাস্য অফার শুনে যারা সতর্ক হয় না, তারা সহজেই এমন স্ক্যামে পা দিয়ে ফেলে।
বিভিন্ন সার্ভিস কিংবা সহায়তার নামে এডভান্স টাকা নিয়ে ব্লক করে দেওয়া
ভুয়া সার্ভিস প্রোভাইডারের রমরমা
বাংলাদেশে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অথবা অন্য কোনো সাহায্য (যেমন: ডকুমেন্ট তৈরিতে সাহায্য, পাসপোর্ট-ভিসা প্রসেসিং) চেয়ে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে প্রচুর পোস্ট দেওয়া হয়। প্রতারক চক্রগুলো এখানে নিজেদের ‘বিশেষজ্ঞ’ সাজিয়ে বলে, “আমাদের সার্ভিস দ্রুত এবং খরচ কম কিন্তু এডভান্স পেমেন্ট দিতে হবে।”
প্রতারণার ধরন
অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, কাজের আগেই একটা ভাগ বা এডভান্স টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পর, ওই সার্ভিস প্রোভাইডার আর যোগাযোগ রাখে না। মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দেয়, বা ফোন ধরেই না। কারণ সবকিছুই আগে থেকে ভুয়া পরিচয়ে করা হয়েছে।
প্রলোভনের ফাঁদ
এদের অনেকেই বিশেষ অফার দেখায়—“আমরা অল্প সময়ে পাসপোর্ট-ভিসা করিয়ে দেব,” বা “ব্যাংক লোনের কাজে সাহায্য করব,” ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ মনে করে একটু কম খরচে আর তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নেওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এডভান্স পাঠানোর পর জানা যায়, পুরোটা ছিল প্রতারণা। কখনো কখনো কাজ শুরুর অজুহাতে ধাপে ধাপে টাকা নেয়। তারপর সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।
বিকাশ থেকে লিজেন্ডারি নাহিদরা কল করে টাকা স্ক্যাম করা
বিকাশ’ বা ‘মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস’ নাম ব্যবহার
নানা সময় ফোনে বা এসএমএসে লোকজন কল পেয়ে থাকেন—“আমি বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছি” অথবা “আমি বিকাশ হেড অফিসের কর্মকর্তা নাহিদ বলছি”—এ রকম পরিচয় দেয়। এরপর তারা বলে, “আপনার অ্যাকাউন্ট আপডেট করতে হবে,” কিংবা “আপনার নম্বর পুরস্কার জিতেছে,” অথবা “আপনার লেনদেন নিরাপদ রাখতে আমাদের কিছু তথ্য লাগবে।”
ভয় ও লোভের মিশ্রণ
অপরাধীরা অনেক সময় বলে, “আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট এখনই বন্ধ হয়ে যাবে, দ্রুত তথ্য না দিলে টাকা তুলতে পারবেন না।” এরকম ভয় দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে পিন নম্বর, ওটিপি ইত্যাদি আদায় করা হয়। আবার কখনও বলে, “আপনি ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছেন, তবে আপনাকে আগে ১০০০ টাকা ফি দিতে হবে।” ভিকটিম লোভে পড়ে সেই টাকা পাঠিয়ে দেয়।
বাস্তব অভিযোগের চিত্র
“সাইবার ৭১”-এর কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসে যে, কেউ বিকাশের নাম করে ফোন দিয়ে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকে না বুঝে নিজের ওটিপি বা পাসওয়ার্ড শেয়ার করে ফেলে। কেউ কেউ আবার “ভাই, আরেকটা নাম্বারে কিছু টাকা পাঠান, তাহলে আপনার পুরো অ্যাকাউন্ট সচল হবে” এ রকম কথায় বিশ্বাস করে টাকা পাঠিয়ে দেন। শেষমেষ তারা বুঝতে পারেন, সবটাই ছিল সাজানো নাটক।
কেস স্টাডি: শারমিনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার!
সমস্যা (না জানার কারণে যা ঘটেছে):
শারমিন ফেসবুকে অন্যান্য বন্ধুদের মতোই স্বাভাবিক ব্যবহার করতেন। তিনি জানতেন না কীভাবে প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক করতে হয়। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তার প্রোফাইল খোলা ছিলো (পাবলিক)। একজন অসাধু ব্যক্তি তার ছবি ডাউনলোড করে অন্য একটি ফেক অ্যাকাউন্ট চালু করে এবং সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন হুমকি ও প্রতারণা শুরু করে। দেশে সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সচেতনতা কম থাকায় এবং আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সঠিকভাবে কীভাবে অভিযোগ করতে হয়, সেটি না জানায় শুরুতে তিনি সমস্যার সমাধান পাননি।
সমাধান (জেনে যাওয়ার পর সে কী করলো):
  • ফেসবুক প্রোফাইল লক করে এবং “Friends Only” প্রাইভেসি ব্যবহার করা শুরু করলেন।
  • ফেক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকে রিপোর্ট করলেন এবং আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সাইবার ইউনিটকে জানালেন।
  • পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে সচেতনতা ছড়ালেন।
শিক্ষা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সচেতনতা কম থাকায় ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্যের অপব্যবহার সহজে হয়। সঠিক জ্ঞান ও প্রক্রিয়া জানা থাকলে অনেক বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
বিশ্বের অন্যতম সহজ টার্গেট কেন বাংলাদেশ?
অপার সম্ভাবনাময় ডিজিটাল বিবর্তন
প্রথম কারণ হিসেবে, বাংলাদেশ একদিকে যেমন দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের পথে এগোচ্ছে, তেমনই এই ডিজিটাল রূপান্তরের প্রয়োজনীয় ভিত্তি (Fundamental Cybersecurity Infrastructure) এখনো দুর্বল।
  • করোনার পর অনলাইন ব্যবহার বেড়েছে: লকডাউন এবং পরবর্তী সময়ে মানুষ অনলাইনে অনেক বেশি সময় কাটিয়েছে। ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন ক্লাস, ওয়ার্ক ফ্রম হোম—সব একত্রে প্রযুক্তিগত সুযোগের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে।
  • নতুন প্ল্যাটফর্ম ও সেবা: ব্যবসা থেকে শুরু করে সরকারি অফিস—প্রতিটি জায়গায় নতুন নতুন অনলাইন সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এসব সিস্টেমে প্রায়ই যথাযথ নিরাপত্তা টেস্ট করা হয় না, বা রেগুলার পেনিট্রেশন টেস্টের মতো পদ্ধতি মেনে চলা হয় না। ফলে হ্যাকারদের জন্য এটি এক বিশাল সুযোগ।
কম সাইবার নিরাপত্তা জ্ঞানসম্পন্ন ব্যবহারকারী
অনেক ব্যবহারকারী মাত্রই ইন্টারনেটে ঢুকেছেন, স্মার্টফোন ব্যবহার করা শিখেছেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত হয়েছেন। তারা ফিশিং, ম্যালওয়্যার, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন নন।
  • ফেসবুক, ইমেইলের সাধারণ সুরক্ষা নিয়েও অজ্ঞতা: পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করা, টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) চালু রাখা—এসব বিষয় অনেক ব্যবহারকারীই জানেন না বা ব্যবহার করেন না।
  • ভুলভাল লিঙ্কে ক্লিকের প্রবণতা: অতি আকর্ষণীয় বা লোভনীয় পোস্ট ও লিঙ্কে ক্লিক করে মানুষ সহজেই ফিশিংয়ের ফাঁদে পা দেয়। বাংলাদেশে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে।
লক্ষ্যবস্তু কেন?
  • বিশ্বে আলোচিত ঘটনা: বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাক করে বিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনা পুরো বিশ্বেই আলোড়ন তুলেছিল। সেই থেকে আমাদের আর্থিক খাত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে তুলনামূলকভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, তা সবার নজরে এসেছে।
  • দুর্বল প্রোটোকল ও নীতিমালা: উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামো ও বাস্তবায়ন এখনো দৃঢ় নয়। এ কারণে গ্লোবাল হ্যাকার গ্রুপগুলো সহজেই আমাদের দেশের সিস্টেমকে লক্ষ্যবস্তু বানায়।
কেন আমরা সহজ টার্গেট?
আমরা কেনো সাইবার নিরাপত্তা ঝুকিতে? বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দেশ হিসেবে আমরাই সবার টার্গেটে কেনো থাকি?
দেশ হিসেবে আমরা অপার সম্ভাবনাময়ী। পাশাপাশি করোনার লক ডাউনের পর থেকেই মূলত আইটি / অনলাইন ব্যবহারকারী আমাদের দেশে বেড়েছে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে এখন অনলাইন সিস্টেম তৈরি করেছে। অনলাইন ব্যবহার করলেও পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় আমরা সব সময়ই টার্গেটে থাকি। বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাক করে বিলিয়ন ডলার চুরি করা সহ প্রতিনিয়ত ব্যক্তি / প্রতিষ্ঠান কিংবা রাস্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা হ্যাকিং এর শিকার হচ্ছি। কেনো আমরা এতো টার্গেট?
কারণ আমরা সহজ টার্গেট। আমাদের মধ্যে আইটি জ্ঞান আসলেও সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান নেই। সাইবার সিকিউরিটি অপার সম্ভাবনাময়ী পেশা হওয়ার পরেও আমাদের দেশের তরুণেরা এর চর্চায় আসতে পারে নি। বেসরকারি সেক্টরের কথা বাদই দেই, সরকারি সেক্টরের প্রতিটি দফতর এবং প্রজেক্টে যোগ নিয়োগ দেওয়ার মতোও সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিষ্ট দেশে নেই।
এই স্বল্পতার কিছু কারণ আছে।
কারণ, সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিষ্টদের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। দেশের প্রথম বাণিজ্যিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত ১৩ বছর ধরে এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি থেকে আমার ব্যক্তিগত তত্বাবধায়নে সাইবার সিকিউরিটি এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং কোর্স পরিচালনা করে আসছি। এখানে যারা ভালো করছে বিশ্বব্যাপী সুযোগ থাকায় বহু মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরেই পাড়ি জমাচ্ছে।
পাশাপাশি ভালো আয়ের সুযোগ থাকায় বাকীরা ফ্রিল্যান্সিং কিংবা রিমোট চাকুরির জন্যই ঝুকছে।
কেনো সবাই শিখতে আগ্রহী হয় না?
কারণ, আমাদের দেশে সাইবার সিকিউরিটিকে অনেক কঠিন জ্ঞান হিসেবে মনে করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং সহ ক্যারিয়ার নির্ভর প্রফেশনাল কোর্সের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা মনে করে ফেসবুক মার্কেটিং কিংবা ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে ডেভেলপমেন্ট অথবা সহজ কিছু টপিক শিখতে চায়। এই সেক্টর গুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে চাহিদা থাকলেও ক্যারিয়ার নির্ভর করা খুব কঠিন। অথচ, সাইবার সিকিউরিটি কিংবা আইটির স্পেশালিষ্ট সেক্টরগুলোও শিখা কঠিন কিছু না। মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করলেই যে কোন আগ্রহী শিক্ষার্থীরা এই অপার সম্ভাবনাময় সেক্টরে কাজ করতে পারে। দেশের জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
কেনো বাংলাদেশ সর্বদাই ঝুঁকির মুখে?

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে ডিজিটালাইজেশনের ফলে দেশের প্রায় সবগুলো খাতেই অনলাইনের প্রভাব বাড়ছে। একদিকে অনলাইনে লেনদেন, সরকারি-বেসরকারি সেবাপ্রদান, ব্যাংকিং ও ফিনটেকের প্রসার; অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার—সব মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু একই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকিও অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সহজ টার্গেট হয়ে উঠেছে নানা কারণে—সরকারি ও বেসরকারি খাতে সাইবার নিরাপত্তার চর্চা খুবই নগণ্য, পেশাদার সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের সংকট, তরুণদের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে ভীতিকর বা কঠিন ধারণা, এবং সুগঠিত নীতিমালার অভাব—এসবই যুক্ত হয়ে আমাদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আইটি জ্ঞান থাকলেও সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান নেই
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে আইটি খাতে অগ্রগতি ঘটছে। প্রচুর তরুণ প্রোগ্রামিং শিখছেন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করছেন। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি চর্চা বা পেনিট্রেশন টেস্টিং, ডিজিটাল ফরেনসিক এর মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন কিংবা শিখেছেন এমন মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা।
  • ইকোসিস্টেমের অভাব: বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও সুসংগঠিত চর্চার প্ল্যাটফর্ম এখনো সীমিত। প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার সিকিউরিটির ল্যাব অনুশীলন নেই।
  • প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব: সরকারি দপ্তর হোক বা বেসরকারি—প্রতিটি জায়গায় সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্টের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ ব্যক্তি নেই। ফলাফল: সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষা কার্যক্রম থাকে খুবই দুর্বল।
সাইবার সিকিউরিটি দক্ষরা বিদেশমুখী
বিশ্ববাজারে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্টদের প্রচুর চাহিদা। যে কজন তরুণ বাংলাদেশে থেকে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে পড়াশোনা ও চর্চা করেন, তারা খুব দ্রুতই উন্নত দেশে বা রিমোট জবের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
  • উচ্চ আয়ের সুযোগ: দেশের বাইরে বা গ্লোবাল মার্কেটে সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি।
  • দেশে কাজের পরিসর সীমিত: সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এখনো সাইবার সিকিউরিটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্টরা দীর্ঘমেয়াদে তত সুযোগ ও মূল্যায়ন পান না।
তরুণদের ভীতি ও ভুল ধারণা
অনেক শিক্ষার্থী বা তরুণ পেশাদার মনে করেন সাইবার সিকিউরিটি অত্যন্ত জটিল বা কঠিন একটি ক্ষেত্র। তার চেয়ে ফেসবুক মার্কেটিং, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি তুলনামূলক সহজ। তাই তারা এসব ক্ষেত্রে ঝোঁকে। বাস্তবপক্ষে এইসকল সেক্টরে কাজ শিখাটা সহজ হলেও ক্যারিয়ার গড়া খুবই কষ্টকর।
  • অবদান/চাহিদা বোঝার অভাব: সাইবার সিকিউরিটি যে শুধু কঠিন নয়, বরং খুবই সম্ভাবনাময় পেশা—অনেকেই তা উপলব্ধি করতে পারেন না।
  • আধুনিক শিখন পদ্ধতির অভাব: পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ মেন্টর, প্র্যাকটিকাল ল্যাব ইত্যাদি না থাকায় আগ্রহী কেউ হয়তো শুরুতেই জটিল ধাপে আটকে যায়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে আর আগাতে চায় না।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাইবার নিরাপত্তার নড়বড়ে অবস্থা
সরকারি দপ্তর ও প্রকল্পে নিরাপত্তার অভাব
বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি দপ্তর কোনো না কোনোভাবে ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিস্টেম তৈরির পর নিয়মিত আপডেট, পেনিট্রেশন টেস্ট, লগ মনিটরিং, কিংবা জরুরি রেসপন্স টিম—এসব থাকে না।
  • কোনো সাইবার সিকিউরিটি টিম নেই: বেশির ভাগ সরকারি প্রকল্পেই সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার মতো বাজেট বা উদ্যোগ রাখা হয় না
  • স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব: পলিসি স্তরে কিছু পরিকল্পনা করা হলেও তা কার্যকর করার জন্য দক্ষ লোকবলের অভাব থেকে যায়। যেমন: “ডিজিটাল বাংলাদেশ” উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, কিন্তু সাইবার নিরাপত্তায় প্রবল ঘাটতি রয়ে গেছে।
বেসরকারি খাতের করুণ দশা
  • মাঝারি ও ছোট ব্যবসা: অনেকে আবার ধরে নেয়, ‘আমার ছোট ব্যবসার কী এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে যে হ্যাকাররা নেবে?’ ফলাফল: ন্যূনতম সুরক্ষা পদ্ধতিও তারা মেনে চলে না।
  • বৃহৎ প্রতিষ্ঠানেও ঘাটতি: বড় কর্পোরেট বা ফিনটেক প্রতিষ্ঠান কিছুটা সচেতন হলেও পর্যাপ্ত বাজেট বা সাইবার সিকিউরিটি টিম থাকে না। অনেক সময় নামমাত্র অ্যান্টিভাইরাস বা ফায়ারওয়াল লাগিয়েই নিশ্চিন্ত হয়ে থাকেন মালিকরা।
সাইবার সিকিউরিটিকে কঠিন মনে করা
ফ্রিল্যান্সিং বা আইটি ক্যারিয়ার বলতে অনেক তরুণ বোঝেন “ওয়েব ডিজাইন, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং” ইত্যাদি। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে তারা প্রায়ই এই সেক্টরকে এড়িয়ে যান।
  • প্রচারণার অভাব: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো শিক্ষক না থাকায় বিষয়টি তারা এড়িয়ে যেতে চায়।
  • ক্যারিয়ার সাপোর্টের অভাব: কেউ সাইবার সিকিউরিটি শিখতে চাইলে যথাযথ কোর্স, ল্যাব, মেন্টর—এগুলোর নিশ্চয়তা সহজে পায় না।
যারা শেখে, তারা দেশের বাইরেই পাড়ি জমায়
সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিং-এর ওপর কিছু প্রশিক্ষণ বা কোর্স বাংলাদেশে চালু হয়েছে। কয়েক বছর পড়াশোনা করে বাস্তব দক্ষতা অর্জনের পর দেখা যায়, এই তরুণদের অনেকেই ভালো আয়ের জন্য বা বিশ্বব্যাপী বড় কোম্পানিতে কাজের সুযোগের জন্য বিদেশমুখী হন।
  • স্থানীয় চাকরি ও বেতন কাঠামো: দেশের ভেতরে এই সেক্টরে উপযুক্ত বেতন ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের অভাব তাদের দেশের বাইরের কোম্পানির দিকে টেনে নেয়।
  • ফ্রিল্যান্সিং বা রিমোট ওয়ার্ক: যারা দেশেই থাকছেন, তারাও বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে পছন্দ করেন। এ কারণে দেশে সাইবার সিকিউরিটি খাতে দক্ষ লোকবল গড়ে ওঠে না।
সাইবার নিরাপত্তায় স্বল্পতার কারণসমূহ
অভাবনীয় চাহিদা ও সরবরাহের বিশাল ফারাক
বিশ্বব্যাপী সাইবার সিকিউরিটি পেশাজীবীর চাহিদা আছে কোটি কোটি। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোর্সের সংখ্যা নগণ্য। বিদেশে পড়ার বা স্পেশালাইজড সার্টিফিকেশন নেওয়ার খরচও অনেক বেশি।
  • প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃত কোর্সের অভাব: অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি/সিএসই ডিপার্টমেন্ট থাকলেও সাইবার সিকিউরিটি কারিকুলাম অন্তর্ভুক্ত নেই।
  • গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) অপর্যাপ্ত: নিজস্ব সাইবার নিরাপত্তা সমাধান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রায় কোনো গবেষণা নেই বললেই চলে।
সরকারের স্বীকৃতি ও সহায়তার অভাব
যদি সরকারি পর্যায়ে সাইবার সিকিউরিটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নীতিমালা তৈরি করা হতো, দেশে দক্ষতার বিকাশে ব্যাপক পরিমাণ বিনিয়োগ ও উৎসাহ দেওয়া হতো—তাহলে হয়তো পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত।
  • বিশেষ বাহিনী বা টাস্কফোর্সের অভাব: কিছু উদ্যোগ থাকলেও তা নিতান্তই সীমিত। ফলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তার সামগ্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
  • উদ্যোক্তা ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ নেই: অনেক দেশে সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাত একত্রে কাজ করে সাইবার সিকিউরিটি এক্সপোজার বাড়ায়। আমাদের দেশে এখনো সে মানসিকতা গড়ে ওঠেনি।

সাধারণ মানুষের সাইবার নিরাপত্তায় অনীহা ও ঝুঁকি
আমার কী এমন হবে?’ মানসিকতা
অনেক মানুষ মনে করেন, “আমার তেমন কিছুই নেই—হ্যাকাররা আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কী পাবে?” আসলে বিষয়টি এত সহজ নয়। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট বা ফোনে থাকা যাবতীয় তথ্য (ছবি, পরিচিতি, মেসেজ, পেমেন্ট মাধ্যম) হামলাকারীদের কাছে মূল্যবান।
  • ব্ল্যাকমেইল ও পরিচয় চুরি: সামাজিক মূল্য বা সুনাম নষ্ট করার জন্য ব্যক্তিগত ছবি/তথ্য কাজে লাগানো হয়। আবার কারো পরিচয় চুরি করে নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ওয়ালেট থেকে টাকা লেনদেন করা এখন খুব সাধারণ বিষয়। এ সব ক্ষেত্রে একটু অসতর্ক থাকলেই কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়।
সহজে ভুলে যাওয়া ও দ্রুত মানিয়ে নেওয়া
একটি বড় ধরনের সাইবার হামলা বা প্রতারণার ঘটনা ঘটলে সাময়িকভাবে হইচই হয়। কিন্তু কিছুদিন পর মানুষ আবার আগের মতো অসতর্ক ভাবে অনলাইন ব্যবহার শুরু করে।
  • গভীর অনুশোচনা ও দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা হয় না: কেউ একজন প্রতারিত হলে বাকিরা সাময়িকভাবে সচেতন হয়, আবার ধীরে ধীরে ভুলে যায়। রাষ্ট্র বা সমাজের স্তরে প্রতিষ্ঠিত সুরক্ষা-ব্যবস্থা গড়ে ওঠে না বলে একই ভুল পুনরাবৃত্তি ঘটে।
অনলাইন ব্যবহার ও কাঙ্ক্ষিত সচেতনতার অভাব
অদক্ষ পরিচালনা ও অসম্পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা
হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স ও ফিনটেক—সব জায়গায়ই প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু হচ্ছে। কিন্তু এসব সেবা পরিচালনা করছেন এমন লোকজনের অনেকেই সাইবার সিকিউরিটির মৌলিক বিষয়গুলো জানেন না।
  • পাসওয়ার্ড শেয়ারিং ও অ্যাক্সেস কনট্রোলের সমস্যা: একাধিক ব্যক্তি একটিমাত্র অ্যাডমিন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন, কোথাও লেভেলভিত্তিক অ্যাক্সেস কন্ট্রোল নেই—ফলে সামান্য ফাঁকফোকর থেকেই বড় ধরনের হামলার সুযোগ থাকে।
  • লগ মনিটরিং ও ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম নেই: কোথাও যদি এক্সটার্নাল অ্যাটাক হয়, কেউ সেটি ধরতে পারছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের সিস্টেম পর্যন্ত নেই। তাই হ্যাকাররা সহজে ঢুকে পড়ে।
শিক্ষা ও মিডিয়া সচেতনতার ঘাটতি
  • মিডিয়ায় পর্যাপ্ত কাভারেজ নেই: পত্র-পত্রিকা বা সংবাদ মাধ্যমে সাইবার অপরাধ নিয়ে আলোচনা হলেও মূলত ঘটনার উপসর্গ উঠে আসে; এর গভীর কাঠামোগত কারণ বা বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ খুব একটা হয় না।
  • একাডেমিক পাঠ্যক্রমে স্থানপ্রাপ্তি: স্কুল-কলেজে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার বা সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। ফলে ছোটবেলা থেকেই সবাই অনলাইনে ভ্রান্ত অভ্যাস গড়ে তোলে।
আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা যেমন বিশাল, তেমনি সাইবার নিরাপত্তা রক্ষার চ্যালেঞ্জও বিরাট। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা উন্নয়ন, জনসচেতনতা—এই উপাদানগুলো দীর্ঘ সময়ের প্রয়াসে গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু এই বইয়ে আমরা কোনো সমাধান নিয়ে আলাপ করিনি। বরং কেন এই ঝুঁকি ও দুর্বলতা বিরাজ করছে, সেই চিত্রটি পরিষ্কার করা হয়েছে। আশা করি, এ থেকে অন্তত বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার স্বরূপ, আমাদের পিছিয়ে থাকার কারণ ও ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যাবে। যে কেউ যদি ভবিষ্যতে এই সেক্টরে কাজ করতে চায়, তবে এসব সমস্যার মূল বিষয়গুলো জেনে রাখাই তার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
সাইবার নিরাপত্তা সংকটের কার্যকর সমাধান: ইথিক্যাল হ্যাকিং ও সাইবার সিকিউরিটি কোর্স
বাংলাদেশ বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তায় এক ধরনের ‘ট্রান্সিশন পয়েন্ট’-এ অবস্থান করছে। ডিজিটালাইজেশনের গতি বাড়ছে; একইসঙ্গে সাইবার আক্রমণও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সাইবার সিকিউরিটিকে ত্বরান্বিতভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বাস্তব ও টেকসই সমাধান হলো—সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখা। দেশে এ বিষয়ে দক্ষ জনবল যত বাড়বে, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাইবার হামলা প্রতিরোধের সক্ষমতাও তত বাড়বে।
কেন ইথিক্যাল হ্যাকিং ও সাইবার সিকিউরিটি শেখার দরকার?
১. বিশ্বব্যাপী চাহিদা
সারা বিশ্বে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্টের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্টার্টআপ সবখানেই সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য দক্ষ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ খোঁজা হয়। এই পেশাটির বেতন কাঠামো, কাজের বৈচিত্র্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।
২. দেশের প্রথম বাণিজ্যিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা
আমরা এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি গত ১৩ বছর ধরে সাইবার সিকিউরিটি এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং কোর্স পরিচালনা করে আসছি। এখানে যারা ভালো করছে তারা বিশ্বব্যাপী চাকরি পাচ্ছে, আবার কেউ কেউ ফ্রিল্যান্সিং বা রিমোট জব করে ভালো আয় করছেন। ফলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ রয়েছে।
৩. ভুল ধারণা “কঠিন বিদ্যা”
অনেকেই মনে করেন সাইবার সিকিউরিটি খুব জটিল কিংবা ‘বুঝে ওঠা অসম্ভব’। আসলে সঠিক মেন্টর, কাঠামোবদ্ধ সিলেবাস এবং নিয়মিত অনুশীলন থাকলে এটি অন্য যেকোনো প্রযুক্তিগত স্কিলের মতোই আয়ত্তে আনা যায়। আমাদের একাডেমিতে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মাথায় রেখেই কোর্স সাজানো হয়েছে, যাতে যে কেউ ধাপে ধাপে শিখতে পারে।
৪. ফেসবুক মার্কেটিং বা সহজ টপিকের ওপর নির্ভরশীলতা
বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দ্রুত আয় করতে চায় বলে ফেসবুক মার্কেটিং, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি সহজ বিষয়ের দিকে ঝোঁকে। এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিক চাহিদা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি পেশাগত স্থিতিশীলতা বা উচ্চ আয়ের নিশ্চয়তা কম। অথচ সাইবার সিকিউরিটি সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করলে সেটি ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজে লাগিয়ে একজন পেশাদার হওয়া সম্ভব।
৫. শিক্ষার্থী বান্ধব নীতিমালা
আমাদের কোর্সে শিক্ষার্থীরা যাতে ঝুঁকি অনুভব না করে, তাই আমরা দিয়েছি “No Question Asked Refund Policy”। অর্থাৎ, প্রথম দুই সপ্তাহ ক্লাস করে যদি কেউ বুঝতে পারে সেক্টরটি তার জন্য কঠিন বা অনুপযুক্ত, তাহলে এডমিশন ফি সম্পূর্ণ রিফান্ড নিয়ে কোর্স ক্যান্সেল করতে পারবে। এতে নতুনদের মনে ভয় বা দ্বিধা থাকে না।
কীভাবে কোর্স এগিয়ে আনবে দেশের সাইবার সুরক্ষা?
  • দক্ষ কর্মী সৃষ্টি: সরকারি-বেসরকারি খাতের সাইবার নিরাপত্তা চাহিদা মেটাতে আমাদের দরকার বহুমুখী দক্ষ কর্মী বাহিনী। এই কোর্সে হাতে-কলমে শেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে।
  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: নিজের ডিভাইস, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, অনলাইন লেনদেন ইত্যাদি সুরক্ষিত রাখা যাবে। ফলে সাধারণ মানুষও হ্যাকিং বা ফিশিংয়ের শিকার হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
  • বিদেশি মুদ্রা আয়: ফ্রিল্যান্সিং বা রিমোট জব করে তরুণরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ভবিষ্যতে দেশের সাইবার নিরাপত্তা পরিকাঠামো উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে পারবে।
দেশে সাইবার নিরাপত্তা সংকট নিরসনের একটি মূলমন্ত্র হলো—সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি। এখানে ভয় বা দুরূহতার কিছু নেই, বরং সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে যে কেউ সহজেই এই সেক্টরে অবদান রাখতে পারে। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সার্বক্ষণিক খোঁজ এখন দক্ষ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের জন্য। কাজেই আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আপনি কি সামনের সারিতে থেকে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করে নিজের ক্যারিয়ার এবং দেশের নিরাপত্তা—দুটোই এগিয়ে নিয়ে যেতে চান? নাকি পুরোনো ধ্যানধারণা নিয়ে শুধু সহজ কয়েকটি স্কিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চান?
আমরা বিশ্বাস করি, নতুনদের মনে ভীতি দূর করে, বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে কেউ এই সেক্টরে এগিয়ে আসতে পারে। আর সেই লক্ষ্যেই আমাদের একাডেমির “No Question Asked Refund Policy”—যাতে কেউ মধ্যপথে বুঝতে পারে, তার জন্য এটি উপযুক্ত কি না। এই আস্থা ও স্বচ্ছতার পেছনে রয়েছে আমাদের ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা, যা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিশ্বব্যাপী সাফল্যের পথ দেখিয়েছে। আজকের বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা ও ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখাকে আরও ছড়িয়ে দিতে পারলে, সাইবার হামলার মাত্রা অন্তত কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে। আর সেটিই হতে পারে দেশের সাইবার নিরাপত্তায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
হ্যাকিংয়ের সাধারণ কিছু পদ্ধতি
ফিশিং (Phishing) কী? ফিশিং হলো এক ধরনের অনলাইন প্রতারণার পদ্ধতি, যেখানে আক্রমণকারী (হ্যাকার) ভিকটিমের কাছ থেকে সেনসিটিভ তথ্য (যেমন: পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যক্তিগত ডেটা ইত্যাদি) হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। সাধারণত হ্যাকার একটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্র বা ব্র্যান্ড সেজে ইমেইল, এসএমএস বা লিঙ্ক পাঠায়, যাতে ব্যবহারকারী সেটিকে সত্যিকারের ম্যাসেজ ভেবে ক্লিক করে বা তথ্য প্রদান করে। কীভাবে ফিশিং কাজ করে?
প্রতারণামূলক ইমেইল/বার্তা: আক্রমণকারী আপনার ব্যাংক, পেমেন্ট গেটওয়ে, জনপ্রিয় সেবা বা সরকারি সংস্থার নাম ও লোগো ব্যবহার করে একটি ইমেইল বা ম্যাসেজ পাঠায়। এই বার্তায় সাধারণত আপনার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা বা নতুন অফার/গিফটের কথা উল্লেখ করা হয়।
প্রলোভন বা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী বার্তা: বার্তায় লেখা থাকে যে আপনার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে বা আপনাকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু আপডেট করতে হবে, অথবা লোভনীয় কোনো অফার রয়েছে।
ভুয়া লিঙ্ক ক্লিক: বার্তায় থাকা লিঙ্কটি দেখতে আপনার ব্যাংক বা নির্ভরযোগ্য সাইটের মতো হলেও আসলে এটি হ্যাকারদের তৈরি একটি ক্লোন সাইট (ভুয়া ওয়েবসাইট)।
তথ্য চুরি: আপনি যদি সেই লিঙ্কে ক্লিক করে আপনার ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড বা কার্ড তথ্য দিয়ে লগইন করেন, সেটি সরাসরি হ্যাকারদের সার্ভারে চলে যাবে। ফলে হ্যাকার আপনার আসল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে।
ক্লাসিক (ইমেইল) ফিশিং: এটাই ফিশিংয়ের সবচেয়ে প্রচলিত ধরন। এখানে হ্যাকাররা আপনার ব্যাংক, অনলাইন পেমেন্ট সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগো ব্যবহার করে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ইমেইল পাঠায়। ইমেইলে সাধারণত একটি লিঙ্ক থাকে যা ক্লিক করলে বা লগইন করলে আপনার তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়।

কৌশল:
  • জরুরি বার্তা বা লোভনীয় অফারের কথা বলে দ্রুত ক্লিক করাতে চায়।
  • ভুয়া (ক্লোন) ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে ইউজারনেম/পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে।
স্পিয়ার ফিশিং (Spear Phishing) : এটিকে টার্গেটেড ফিশিং বলা যেতে পারে। স্পিয়ার ফিশিংয়ে অপরাধীরা নির্দিষ্ট ব্যক্তি, দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নজর রেখে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তারপর খুব ব্যক্তিগত ও নির্ভুল তথ্য ব্যবহার করে বিশ্বাস অর্জন করে।

কৌশল:
  • সাধারণত নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কাস্টমাইজড বার্তা তৈরি করা হয়।
  • “ব্যক্তিগত” টোন ব্যবহার করা হয় যাতে ভিকটিম মনে করে সত্যিই পরিচিত কেউ ইমেইলটি পাঠিয়েছে।
ক্লোন ফিশিং (Clone Phishing): এই পদ্ধতিতে কোনো একটি আসল ও বিশ্বস্ত ইমেইলের “ক্লোন” তৈরি করা হয়। বার্তাটির প্রেরক, বিষয়, কন্টেন্ট অনেকটাই আসলের মতো দেখায়, কিন্তু সেটিতে একটি ভুয়া লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট থাকে।

কৌশল:
  • পূর্বে পাওয়া কোনো বৈধ ইমেইল হুবহু নকল করে পুনরায় পাঠানো হয়।
  • ইমেইলের সংযুক্ত লিঙ্ক বা ফাইল পরিবর্তন করে সেটাকে ক্ষতিকর লিঙ্ক বা ফাইল বানানো হয়।
স্মিশিং (Smishing) : “SMS” + “Phishing” = “Smishing”। এটি হলো এসএমএস-এর মাধ্যমে ফিশিং। মেসেজে সাধারণত আপনার ব্যাংক বা মোবাইল অপারেটরের নাম ব্যবহার করে জরুরি আপডেট, পুরস্কার বা অফারের কথা বলে একটি লিঙ্কে ক্লিক করাতে চায়।

কৌশল:
  • ঝুঁকিপূর্ণ লিঙ্ক এসএমএসে পাঠিয়ে ক্লিক করানোর চেষ্টা করে।
  • প্রলোভন বা ভয় দেখিয়ে (যেমন: অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে) ভিকটিমকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা হয়।
ভিশিং (Vishing): “Voice” + “Phishing” = “Vishing”। ফোনকলের মাধ্যমে ফিশিংকে ভিশিং বলা হয়। এখানে কেউ ব্যাংক, সরকারি অফিস বা অন্য কোনো বিশ্বস্ত উৎসের পরিচয়ে কল করে আপনাকে পাসওয়ার্ড, OTP কিংবা আর্থিক তথ্য চেয়ে বসে।

কৌশল:
  • সাধারণত ব্যাংক বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রতিনিধি সেজে কথা বলে।
  • জরুরি পরিস্থিতি বা আর্থিক লেনদেন আটকে যাওয়ার কথা বলে দ্রুত তথ্য আদায়ের চেষ্টা করে।
অ্যাঙ্গলার ফিশিং (Angler Phishing): সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি) ব্যবহার করে ফিশিংকে অনেক সময় অ্যাঙ্গলার ফিশিং বলে। এখানে সাইবার অপরাধীরা জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নামে ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের ফাঁদ পাতে।

কৌশল:
  • কোনো প্রতিষ্ঠান/ব্র্যান্ডের অফিশিয়াল পেজ সেজে গ্রাহকদের অভিযোগ বা সেবা নিয়ে কথা বলে।
  • ইনবক্সে বার্তা পাঠিয়ে লিঙ্কে ক্লিক করাতে বা তথ্য দিতে বলে।
ম্যালওয়্যার (Malware) কীভাবে কাজ করে?
ম্যালওয়্যার হলো বিভিন্ন ক্ষতিকারক সফটওয়্যারের সমষ্টি, যেমন ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান, র‍্যানসমওয়্যার ইত্যাদি। ম্যালওয়্যার আপনার ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এনক্রিপ্ট করে রাখতে পারে বা আপনার ডেটা চুরি করতে পারে।
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Social Engineering) কীভাবে কাজ করে?
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তথ্য আদায় বা প্রতারণা করার পদ্ধতি। হ্যাকাররা বিশ্বাস অর্জন করে, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে আপনার কাছ থেকে ক্রিটিক্যাল তথ্য জেনে নেয় বা আপনাকে কোনো ক্ষতিকারক লিঙ্কে ক্লিক করতে বাধ্য করে।

কী-লগার (Keylogger) কীভাবে কাজ করে?
কী-লগার হলো এমন একটি সফটওয়্যার অথবা হার্ডওয়্যার ডিভাইস, যা আপনার কীবোর্ডে কী টাইপ করা হচ্ছে তা গোপনে রেকর্ড করে রাখে। এতে আপনার পাসওয়ার্ড, মেসেজ, ব্যাংক তথ্যসহ সবকিছু হ্যাকার জানতে পারে।
ব্রুট ফোর্স (Brute Force) কীভাবে কাজ করে?
ব্রুট ফোর্স অ্যাটাক মানে হলো ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সম্ভাব্য পাসওয়ার্ড অনুমান করে একটির পর একটি প্রবেশের চেষ্টা করা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল পাসওয়ার্ড বা ছোট পাসওয়ার্ড হলে এভাবে তা খুব সহজে বের করে ফেলা যায়।
স্নিফিং (Sniffing) বা প্যাকেট স্নিফিং কীভাবে কাজ করে?
স্নিফিং হলো নেটওয়ার্কে প্রেরিত ডেটা প্যাকেটগুলো গোপনে শোনা বা ক্যাপচার করার পদ্ধতি। যদি আপনি অনিরাপদ বা উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, স্নিফার আপনার পাঠানো তথ্য (ইমেল, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি) ধরে ফেলতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়:
  • শেয়ার করা নেটওয়ার্ক এড়িয়ে চলুন: ফ্রি কিংবা অনিরাপদ ওয়াই-ফাইতে সংবেদনশীল কাজ (যেমন: ব্যাংকিং, পার্সোনাল মেসেজ) করা থেকে বিরত থাকুন।
  • HTTPS এনক্রিপশন ব্যবহার করুন: এমন সাইটে কাজ করুন যেখানে HTTPS সুরক্ষিত সংযোগ আছে।
  • ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করুন: ভিপিএন আপনার ডেটা এনক্রিপ্ট করে রাখে, ফলে স্নিফার ডেটা পেলেও বুঝতে পারে না।
র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware) কীভাবে কাজ করে?
র‍্যানসমওয়্যারআপনারসিস্টেমবাফাইলএনক্রিপ্টকরেএবংমুক্তিপণদাবিকরে।আপনিযদিমুক্তিপণনাদেনতাহলেফাইলগুলোআনলককরতেপারবেননা।
ইনসাইডার থ্রেট (Insider Threat) কীভাবে কাজ করে?
কর্মী বা ভেতরের কেউ যদি দুরভিসন্ধি করে, তবে সহজেই কোম্পানির গোপন তথ্য ফাঁস হতে পারে। কখনও কখনও অসাবধানতাবশত বা নিরাপত্তা নিয়ম না মেনে চলার ফলেও লিক হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়
  • নিয়মিত কর্মীদের প্রশিক্ষণ: সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সবার স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার।
  • অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ: শুধুমাত্র প্রয়োজনমতো অ্যাক্সেস দিন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাক্সেস সরিয়ে ফেলুন।
  • সক্রিয় মনিটরিং এবং লগিং: সিস্টেম অ্যাকটিভিটি মনিটর করুন, অস্বাভাবিক আচরণ চিহ্নিত করুন।
ফার্মিং (Pharming) কী:
ফার্মিংয়ের ক্ষেত্রে কম্পিউটার বা রাউটারের DNS সেটিংস পরিবর্তন করে ভিকটিমকে ভুল সাইটে নিয়ে যাওয়া হয়। আপনি ওয়েব ব্রাউজারে ব্যাংকের ঠিকানা টাইপ করলেও আসল সাইটের বদলে ভুয়া সাইট প্রদর্শিত হয়।
কৌশল:
  • ডিএনএস-স্পুফিং এর মাধ্যমে সঠিক ওয়েবসাইটের ঠিকানাকে ভুয়া সাইটে রিডাইরেক্ট করে।
  • ব্যবহারকারী যদি সেটিতে লগইন করে, তার তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যায়।
সার্চ ইঞ্জিন ফিশিং (Search Engine Phishing) কী:
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সার্চ ইঞ্জিনে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ সাইট হিসেবে নিজেদের ভুয়া ওয়েবসাইট জমা দেয়। ব্যবহারকারীরা গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে যখন ঐ ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পায়, তখন সেটিতে ক্লিক করে প্রতারিত হয়।
কৌশল:
  • জনপ্রিয় কীওয়ার্ডকে টার্গেট করে ভুয়া অফার/প্রমোশনাল সাইট তৈরি করা হয়।
  • সার্চ রেজাল্টে উঁচুতে আসার জন্য ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (SEO) স্প্যাম কৌশল ব্যবহার করে।
কেস স্টাডি: তৌফিকের ফিশিং ই-মেইল অভিজ্ঞতা
সমস্যা (না জানার কারণে যা ঘটেছে):
তৌফিক তার অফিসিয়াল ই-মেইলে একটি লিংক পেলেন যেখানে লেখা ছিল, “আপনার মেইলবক্স পূর্ণ, এখনই ক্লিক করে রিসেট করুন।” তিনি বিষয়টি না বুঝেই লিংকে ক্লিক করে অফিসের ই-মেইলের ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করলেন। সাইটটি ছিলো ফিশিং সাইট। ফলে তার অফিস ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের হাতে চলে গেল। এতে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও ক্লায়েন্টদের ডেটা ফাঁস হয়ে বড় ক্ষতি হয়।
সমাধান (জেনে যাওয়ার পর সে কী করলো):
  • প্রথমেই অফিস আইটি ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টি জানিয়ে পাসওয়ার্ড রিসেট করলেন।
  • ফিশিং সম্পর্কে ধারণা নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি সচেতন হলেন, অজানা লিংক বা ই-মেইলে ক্লিক করার আগে যাচাই করা শিখলেন।
  • অফিসে কর্মী হিসেবে অন্যদেরও ফিশিং ও সন্দেহজনক ই-মেইল সম্পর্কে সচেতন করলেন।
শিক্ষা: ফিশিং অন্যতম সাধারণ হ্যাকিং পদ্ধতি। অজানা লিংক বা ই-মেইল যাচাই না করে ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্টসহ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা হাতছাড়া হতে পারে।
ডিভাইসের ফিজিক্যাল সেফটি (Physical Safety)
ডিভাইসের শারীরিক নিরাপত্তা বলতে বোঝায়, আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি সরাসরি হাতে নিয়ে বা ডিভাইসের পোর্টে কিছু লাগিয়ে আপনার তথ্য চুরি অথবা ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করা। অনেক সময় আমরা শুধু অনলাইনে ভাইরাস, হ্যাকিং বা ম্যালওয়্যারের কথা ভাবি, কিন্তু ডিভাইসের গায়ে সরাসরি কোনো সরঞ্জাম (যেমন কী-লগার) বা সফটওয়্যার বসিয়েও আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডেটা চুরি করা সম্ভব। নিচে সহজ ভাষায় বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হলো।
কী-বোর্ড কী-লগার (Keyboard Keylogger) কি?
কী-বোর্ড কী-লগার হলো এমন একটি ডিভাইস বা সফটওয়্যার, যা আপনার কী-বোর্ডে টাইপ করা প্রতিটি অক্ষর রেকর্ড করে। হার্ডওয়্যার কী-লগারগুলো সাধারণত কী-বোর্ডের তারের মধ্যে বা ইউএসবি পোর্টের সাথে ছোট অ্যাডাপ্টারের মতো লাগানো থাকে। কেন বিপজ্জনক? কেউ যদি আপনার কী-লগার বসাতে পারে, তবে আপনার টাইপ করা সবকিছু, যেমন পাসওয়ার্ড, ব্যক্তিগত বার্তা—সবই সে পেয়ে যাবে। ফলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ই-মেইল, ফেসবুকের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্যের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কীভাবে নিরাপদ রাখবেন?
  • নিজের কম্পিউটারের পেছনে বা কী-বোর্ডের সংযোগস্থলে কোনো সন্দেহজনক অতিরিক্ত ডিভাইস লাগানো আছে কি না, মাঝে মাঝে দেখে নিন।
  • অফিস বা পাবলিক জায়গায় কম্পিউটার ব্যবহারের আগে একটু লক্ষ্য করুন, অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেলেই সতর্ক হন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ (যেমন অনলাইন ব্যাংকিং) করার সময় সম্ভব হলে নিজের কম্পিউটার/ল্যাপটপ ব্যবহার করুন।
  • প্রয়োজনে ভার্চুয়াল কী-বোর্ড বা অনস্ক্রিন কী-বোর্ড ব্যবহার করতে পারেন, তবে হার্ডওয়্যার কী-লগারের ক্ষেত্রে এটিও সবসময় কার্যকর না।
মোবাইল ফোন সার্ভিসিং (Repair) ও তথ্য চুরি
সমস্যা কোথায়?
  • মোবাইল ফোন নষ্ট হলে সার্ভিসিংয়ের জন্য দোকানে অথবা সার্ভিস সেন্টারে দিয়ে আসতে হয়।
  • অতি প্রয়োজনে ফোন ফেলে রেখে আসলেও সেখানে থাকা আপনার ছবি, ভিডিও, বার্তা, ব্যাংক অ্যাপ ইত্যাদি কপি করে রাখতে পারে অসাধু ব্যক্তি।
  • পরে আপনার এসব ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল বা হুমকি দিতে পারে।




কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
যদি ছোটখাটো সমস্যা হয়, অনলাইনে টিপস দেখে নিজে ঠিক করার চেষ্টা করুন। বড় ধরনের সমস্যা হলে এমন সার্ভিস সেন্টার খুঁজুন যেখানে তারা “On-Spot Repair” বা আপনার সামনে মেরামত করে। ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডেটা (ছবি, ভিডিও) থাকলে সার্ভিসিংয়ের আগে তা অন্য কোথাও ব্যাকআপ করে ফোন থেকে মুছে রাখুন।
যেখানেই ফোন সার্ভিস করতে দিন না কেন, তাদের পরিচিতি, কাজের দক্ষতা এবং নৈতিকতা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নিন।
অজান্তে পাসওয়ার্ড টুল চালানো কীভাবে হয়?
আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কাউকে কিছুক্ষণ ব্যবহার করতে দিলেন। সে আপনার অজান্তে একটি ছোট সফটওয়্যার চালাল, যা আপনার ব্রাউজারে বা সিস্টেমে সেভ থাকা সব পাসওয়ার্ড এক মিনিটে বের করে ফেলতে পারে। ফলে আপনার ফেসবুক, ই-মেইল, ব্যাংক অ্যাপ—সবকিছুর পাসওয়ার্ড জেনে যেতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়
  • নিজের ডিভাইস কখনোই অন্য কাউকে নিরিবিলি বা একান্তে ব্যবহার করতে দেবেন না।
  • খুব দরকার হলে আপনার সামনেই ব্যবহার করতে দিন এবং কী করছেন খেয়াল রাখুন।
  • সবখানে পাসওয়ার্ড সেভ করে না রেখে কিছু কিছু সময় নিজে টাইপ করে লগইন করুন, যাতে কেউ ব্রাউজার থেকে সহজে সংগ্রহ করতে না পারে।
  • দুই স্তরের নিরাপত্তা (2FA/Two-Factor Authentication) চালু রাখুন; শুধু পাসওয়ার্ড জানলেই যেন অ্যাকাউন্টে ঢোকা না যায়।
ডিভাইস ছেড়ে না রাখা ও অন্যান্য সুরক্ষা
কম্পিউটার লক করুন: অফিসে বা বাসায় কম্পিউটার চালু রেখে কোথাও যাবেন না। সামান্য সময়ের জন্য হলেও পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে যান।
অপরিচিত পেনড্রাইভ বা ডিভাইস ব্যবহার: অজানা ফ্ল্যাশ ড্রাইভ বা পেনড্রাইভ কম্পিউটারে লাগানোর আগে সতর্ক হোন, সেগুলোতে ম্যালওয়্যার বা কী-লগার থাকতে পারে।
ফিজিক্যাল লক/কেবল: যদি আপনার ল্যাপটপ ঘন ঘন বাইরে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে ল্যাপটপ ক্যাবল লক ব্যবহার করে টেবিল বা অন্য কোথাও আটকে রাখতে পারেন। এতে চুরি রোধ করা সহজ হয়।
সার্বিক পরামর্শ
  • সতর্ক থাকুন: মাঝে মাঝে নিজেই দেখুন, ডিভাইসে বা পোর্টে কোনো অদ্ভুত কিছু লাগানো আছে কি না।
  • বিশ্বস্ত জায়গায় সার্ভিস: ডিভাইস সার্ভিসিংয়ের সময় পরিচিত বা রিভিউ ভালো এমন জায়গা নির্বাচন করুন। সম্ভব হলে আপনার সামনেই ঠিক করান।
  • ডেটা ব্যাকআপ ও নিরাপদ রাখা: গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বা ছবি কোথাও আলাদা জায়গায় ব্যাকআপ রাখুন। সার্ভিসিংয়ের আগে ডেটা সরিয়ে ফেলতে পারলে ভালো।
  • অ্যান্টিভাইরাস ও আপডেট: আপনার অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যারগুলো নিয়মিত আপডেট করুন। পিসিতে ও মোবাইলে ভালো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
  • 2-Factor Authentication (2FA) ব্যবহার করুন: শুধু পাসওয়ার্ডের ওপর নির্ভর না করে মোবাইলে কোড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেসআইডি ইত্যাদি চালু রাখুন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনার ডিভাইসকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অপরিচিত বা অল্পপরিচিত কারো হাতে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল তুলে দেওয়া মানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করা। একটু সচেতন হলেই অনেক বড় ক্ষতি এড়ানো যায়।
ব্যক্তিগত সাইবার সুরক্ষা
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
– সহজে অনুমান করা যায় না এমন অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্নের মিশ্রণ রাখুন।
২. পাসওয়ার্ড নিয়মিত বদলান
– একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ।
৩. ভিন্ন অ্যাকাউন্টে ভিন্ন পাসওয়ার্ড
– সব জায়গায় এক পাসওয়ার্ড ব্যবহারে এক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে বাকিগুলোও ঝুঁকিতে পড়ে।
৪. টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) চালু করুন
– পাসওয়ার্ড ফাঁস হলেও একটি কোড বা OTP ছাড়া কেউ অ্যাক্সেস পাবে না।
৫. পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন
– ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদভাবে সব পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে রাখুন।
৬. অপরিচিত লিংক ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন
– ফিশিং আক্রমণ এড়াতে ইমেইল, মেসেজে আসা সন্দেহজনক লিঙ্ক এড়িয়ে চলুন।
৭. অপরিচিত ইমেইলের অ্যাটাচমেন্ট ডাউনলোড করবেন না
– ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার সংক্রমণের বড় উৎস হতে পারে।
৮. কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে রিভিউ এবং রেটিং দেখুন
– বিশ্বাসযোগ্য না হলে ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন।

৯. অ্যাপের পারমিশন চেক করুন
– অপ্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে থাকলে সেই অ্যাপ এড়িয়ে চলুন।
১০. নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন
– পুরোনো ভার্সনে নিরাপত্তা ত্রুটি থাকতে পারে, যা আপডেটে সংশোধন হয়।
১১. অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করুন
– ওএসের আপডেট অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্যাচ নিয়ে আসে।
১২. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
– ডিজিটাল হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধে এটি কার্যকর।
১৩. অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট রাখুন
– নতুন ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার শনাক্তে এটি জরুরি।
১৪. উইন্ডোজ ডিফেন্ডার বা সিস্টেম বিল্ট-ইন সিকিউরিটি ব্যবহার করুন
– অতিরিক্ত সুরক্ষা দিতে পারে।
১৫. বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে ফাইল ডাউনলোড করুন
– আস্থাহীন সাইট থেকে ফাইল ডাউনলোডে ম্যালওয়্যার ঝুঁকি বাড়ে।
১৬. সন্দেহজনক ওয়েবসাইটের সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না
– ডোমেইন নাম খেয়াল করুন, SSL (https) আছে কি না পরীক্ষা করুন।
১৭. পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
– পাসওয়ার্ড বা ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা এড়িয়ে চলুন।
১৮. VPN ব্যবহার করুন
– অনিরাপদ নেটওয়ার্কে নিজেকে লুকাতে ও ডেটা এনক্রিপ্ট রাখতে সাহায্য করে।
১৯. ফাইল শেয়ারিং সাইট বা টরেন্ট ব্যবহারে সতর্কতা
– সন্দেহজনক ফাইলে ভাইরাস থাকতে পারে।
২০. ব্রাউজারে সেফ ব্রাউজিং মোড চালু করুন
– গুগল ক্রোম/ফায়ারফক্সের নিরাপত্তা সেটিংসগুলো আপডেট রাখুন।
২১. ব্রাউজার ক্যাশে ও কুকি নিয়মিত ক্লিয়ার করুন
– ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত থাকলে তা অপব্যবহার হতে পারে।
২২. অবাঞ্ছিত পপ-আপ ব্লক করুন
– ব্রাউজার সেটিংস থেকে পপ-আপ ব্লকার এনাবল করুন।
২৩. ফিশিং ইমেইল সনাক্ত করতে শিরোনাম ও প্রেরক যাচাই করুন
– সন্দেহ হলে ইমেইল ওপেন না করাই ভালো।
২৪. দৃঢ় নিরাপত্তা সহ অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করুন
– নিজের কার্ড বা ব্যাংকিং তথ্য সুরক্ষিত রাখুন।
২৫. দ্বিতীয় কার্ড বা ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার করতে পারেন
– প্রধান কার্ডের ঝুঁকি কমাতে কাজে লাগবে।
২৬. স্বয়ংক্রিয় লগইন বন্ধ রাখুন
– অন্য কেউ আপনার ডিভাইস পেলে সরাসরি অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না।
২৭. স্ক্রিন লকে পাসকোড/প্যাটার্ন ব্যবহার করুন
– ডিভাইস হারিয়ে গেলেও তথ্য রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।
২৮. নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন
– ভাইরাস বা র‍্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত হলে ডেটা পুনরুদ্ধার করা সহজ হয়।
২৯. গুরুত্বপূর্ণ ডেটা এনক্রিপ্ট করুন
– দুষ্কৃতকারীরা অ্যাক্সেস পেলেও তথ্য বুঝতে পারবে না।
৩০. নিজের ইমেইলের অ্যাক্টিভিটি মনিটর করুন
– কোথাও অস্বাভাবিক লগইন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
৩১. সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না
– হ্যাকাররা তথ্যে ভিত্তি করে টার্গেট অ্যাটাক করতে পারে।
৩২. প্রোফাইল পাবলিক না রেখে বন্ধ বা সীমিত করে রাখুন
– অপ্রয়োজনীয় লোকজনের অ্যাক্সেস রোধ করে।
৩৩. কম্পিউটার অনিরাপদ থাকলে পেনড্রাইভ বা এক্সটার্নাল ড্রাইভ ব্যবহার করবেন না
– পেনড্রাইভ মারফত ম্যালওয়্যার ছড়াতে পারে।
৩৪. কম্পিউটারে ইউএসবি ইনসার্ট করলে আগে স্ক্যান করুন
– অজানা ইউএসবি ডিভাইস থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
৩৫. অপারেটিং সিস্টেমের ফায়ারওয়াল চালু রাখুন
– অননুমোদিত নেটওয়ার্ক এক্সেস প্রতিরোধ করে।
৩৬. সন্দেহজনক ফোন কল বা টেক্সটের মাধ্যমে তথ্য শেয়ার করবেন না
– ব্যাংক বা অফিস পরিচয় দিয়ে তথ্য চাইলেও যাচাই করা জরুরি।
৩৭. ওটিপি (OTP) কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না
– ওটিপি একান্তই নিজের ব্যক্তিগত কোড।
৩৮. নির্দিষ্ট সময় পর পর বিভিন্ন অ্যাপ থেকে লগ আউট করুন
– নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে এটি ভালো অভ্যাস।
৩৯. যে কোনও ডিভাইসে সাইন ইন করার পর লগ আউট করতে ভুলবেন না
– পাবলিক ডিভাইস বা বন্ধুর ডিভাইস হলে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
৪০. শুধু বিশ্বস্ত সাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন
– পাইরেটেড সফটওয়্যার ইনস্টলে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে।
৪১. ওয়েবসাইটের URL মনোযোগ দিয়ে পড়ুন
– বানান ভুল বা অদ্ভুত ডোমেইন থাকলে এটি ফিশিং সাইট হতে পারে।
৪২. সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্দেহজনক কন্টেন্টে ক্লিক এড়িয়ে চলুন
– ভাইরাল বা ক্লিকবেইট লিঙ্কেও ম্যালওয়্যার থাকতে পারে।
৪৩. সন্দেহজনক অ্যাপ/সফটওয়্যারের ইনস্টলেশন পরবর্তী অদ্ভুত আচরণ মনিটর করুন
– অসময়ে বিজ্ঞাপন দেখানো বা ডিভাইস স্লো হয়ে গেলে সতর্ক হোন।
৪৪. বন্ধুদের তথ্য ও হ্যাক হতে পারে – সুতরাং লিংক বা ফাইল শেয়ারিংয়ে সতর্ক থাকুন
– পরিচিত কেউ দিলেও সন্দেহজনক হলে যাচাই করুন।
৪৫. সাধারণ প্রশ্নের জবাবে পাসওয়ার্ড রিসেট কোয়েশ্চনের উত্তর প্রকাশ করবেন না
– সহজ প্রশ্নে সঠিক উত্তর দিলে হ্যাকাররা রিসেট করে অ্যাকাউন্ট নিতে পারে।
৪৬. ওয়াই-ফাই রাউটারের ডিফল্ট পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন
– রাউটারের সাথে দেওয়া পাসওয়ার্ড সfod
হজেই হ্যাকাররা অনুমান করতে পারে।
৪৭. ওয়াই-ফাইতে WPA2 বা WPA3 এনক্রিপশন ব্যবহার করুন
– WEP এর চেয়ে শক্তিশালী এবং নিরাপদ।
৪৮. রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেট রাখুন
– নিরাপত্তা ত্রুটি ঠিক হয় নিয়মিত আপডেটে।
৪৯. সাইবার সুরক্ষার বিষয়ে নিয়মিত জ্ঞান হালনাগাদ করুন
– নতুন নতুন হুমকি সম্পর্কে জানুন ও সতর্ক থাকুন।
৫০. সন্দেহজনক কোনো কার্যকলাপ দেখলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
– আগেভাগে ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
মোবাইল হ্যাকিং কি?
মোবাইল হ্যাকিং হলো আপনার স্মার্টফোন বা মোবাইল ডিভাইসের ডেটা, সিস্টেম বা ফাংশন অবৈধভাবে অ্যাক্সেস করা বা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। হ্যাকাররা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ছবি, বার্তা) চুরি করতে পারে বা ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অন্য কোনো অসদুদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।

কিভাবে সাধারণত মোবাইল হ্যাক করে হ্যাকাররা?
ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার অ্যাপ
– ভুয়া অ্যাপ বা প্রোগ্রামের মাধ্যমে ফোনে ভাইরাস/স্পাইওয়্যার ইনস্টল করিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে।
ফিশিং বা ভুয়া লিংক
– সন্দেহজনক ইমেইল, এসএমএস, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুয়া লিংকে ক্লিক করিয়ে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়।
পাবলিক Wi-Fi বা অনিরাপদ নেটওয়ার্ক
– নিরাপত্তাহীন ওয়াই-ফাই (পাবলিক স্পটে) ব্যবহার করলে ম্যান-ইন-দ্য-মিডল অ্যাটাকের মাধ্যমে তথ্য চুরি করতে পারে।
ব্লুটুথ এক্সপ্লয়ট
– অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্লুটুথ চালু থাকলে, নিরাপত্তা ত্রুটি কাজে লাগিয়ে হ্যাকার ফোনে ঢুকতে পারে।
সিম ক্লোনিং বা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
– মোবাইল অপারেটরের ভুল তথ্য বা আপনার পরিচয় জেনে (সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) সিম ক্লোন করে আপনার ফোন কল/মেসেজে নজরদারি।
স্প্যাম অ্যাপ ও অ্যাডওয়্যার
– প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরের বাইরে থেকে ডাউনলোড করা ভুয়া অ্যাপগুলো ফোনে অ্যাডওয়্যার বা স্পাইওয়্যার যুক্ত করতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে?
সাধারণত আমরা ডাক্তারের দুই ধরন দেখতে পাই। প্রথম ধরনের ডাক্তার আপনার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে, সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেন এবং প্রয়োজনীয় একটা টেস্ট দেন—যেটিতেই বেশিরভাগ সময় রোগ ধরা পড়ে। আর দ্বিতীয় ধরনের ডাক্তার আছেন, যারা অল্প কথায় বা একসাথে বেশ কয়েকটি টেস্ট করেই রোগ নিশ্চিত করতে চান। আমাদের ধারণায়, দক্ষ ডাক্তার তিনিই, যিনি রোগীর কথা শুনেই রোগের প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যান।
ফোন হ্যাক হওয়ার লক্ষণ বোঝার ক্ষেত্রেও অনুরূপ কিছু বিষয় লক্ষ করলেই প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। নিচে দেওয়া ৮টি লক্ষণের মধ্যে কমপক্ষে ৫টি যদি আপনার ফোনে দেখা যায়, তাহলে ফোনটি হ্যাক হয়েছে বলে সন্দেহ করতে পারেন।
১. অস্বাভাবিক ব্যাটারি ক্ষয় ফোন ব্যবহার না করলেও যদি ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায়, সেটি হতে পারে ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যারের কারণে।
২. ফোন অস্বাভাবিক গরম হওয়া ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো অ্যাপ চালু না থাকলেও যদি ফোন গরম থাকে, সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।

৩. ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার অনেক সময় অদৃশ্যভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ব্যবহার করে।
৪. সন্দেহজনক অ্যাপ বা সেটিংস আপনি ইনস্টল করেননি—এমন অ্যাপ দেখা গেলে বা সেটিংস নিজে থেকেই বদলে গেলে সতর্ক হোন।
৫. অস্বাভাবিক পপ-আপ ও বিজ্ঞাপন ফোন বা ব্রাউজারে অতিরিক্ত পপ-আপ, রিডাইরেক্ট হতে থাকলে স্পাইওয়্যার বা অ্যাডওয়্যার সক্রিয় থাকতে পারে।
৬. অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন কল বা মেসেজ আপনার অজান্তে যদি আপনার নম্বর থেকে অন্যকে কল বা এসএমএস চলে যায়, তবে এটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত।
৭. ফোনের কর্মক্ষমতা শ্লথ হয়ে যাওয়া সাধারণ কাজেও ফোন হঠাৎ করে ধীরগতির হয়ে গেলে সম্ভবত ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্ষতিকর কিছু চলছে।
৮. অডিও বা ক্যামেরা চালু থাকার আলামত আপনার অনুমতি ছাড়া কোনো অ্যাপ যদি মাইক্রোফোন বা ক্যামেরা ব্যবহার করে, তবে সেটি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক নতুন ফোনে ক্যামেরা বা মাইকের ব্যবহার শুরু হলে নোটিফিকেশন ডট দেখায়—সেই ইঙ্গিতগুলোকেও গুরুত্ব দিন।
ঐ ৮ টি লক্ষণের মধ্যে যদি একাধিক লক্ষণ একসঙ্গে দেখা যায়, তাহলে আপনার ফোনের নিরাপত্তা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে বা ফোনের সেটিংস রিসেট করে সতর্ক থাকুন। নিরাপদ থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন।
ফোন স্ক্যান করবো কিভাবে?
  • বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস বা সিকিউরিটি অ্যাপ ব্যবহার
    – প্লে স্টোর/অ্যাপ স্টোর থেকে এন্টি ভাইরাস ডাউনলোড করে ফুল স্ক্যান করুন।
  • সিকিউরিটি সেটিংস চেক
    – ফোনের Settings > Security সেকশনে গিয়ে ‘Device admin apps’, ‘Install unknown apps’ ইত্যাদি দেখুন।
  • অজানা অ্যাপের লিস্ট দেখে মুছে ফেলা
    – Settings > Apps থেকে কোনো অদ্ভুত বা আপনার অজানা অ্যাপ থাকলে আনইনস্টল করুন।
  • ব্রাউজার ও স্টোরেজ স্ক্যান
    – ব্রাউজারের কুকি, ক্যাশে ক্লিয়ার করুন, এবং কোনো সন্দেহজনক ডাউনলোড/ফাইল খুঁজে দেখুন।
  • প্রয়োজনে (Factory Reset) করার বিষয়টি নিশ্চিতকরন
    – স্ক্যানের পরও সন্দেহ হলে Factory সেটিং-এ ফিরে যেতে পারেন। এর আগে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ব্যাকআপ রাখবেন।


করণীয় কী কী?
১. অজানা লিঙ্কে ক্লিক না করা
– ফিশিং ও ম্যালওয়্যারের প্রধান পথ বন্ধ করতে সতর্ক থাকুন।
২. বিশ্বস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড
– শুধুমাত্র অফিসিয়াল প্লে স্টোর/অ্যাপ স্টোর ব্যবহার এবং অ্যাপের রিভিউ-রেটিং দেখে ইনস্টল করুন।
৩. নিয়মিত OS এবং অ্যাপ্লিকেশন আপডেট
– আপডেটে সাধারণত নিরাপত্তা প্যাচ থাকে যা হ্যাকিং ঠেকাতে সহায়ক।
৪. অজানা Wi-Fi এড়িয়ে চলা
– পাবলিক Wi-Fi ব্যবহারে VPN ব্যবহার করুন বা অনিরাপদ মনে হলে সেটি এড়িয়ে চলুন।
৫. অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্লুটুথ/লোকেশন চালু না রাখা
– নিরাপত্তার জন্য ব্লুটুথ, এনএফসি, লোকেশন ব্যবহার শেষে বন্ধ করে দিন।
৬. পাসকোড/PIN/বায়োমেট্রিক লক ব্যবহার
– ফোন আনলক পদ্ধতি শক্তিশালী রাখুন, কেউ সরাসরি ফোন ব্যবহার করে অ্যাক্সেস পাবে না।
৭. অ্যান্টিভাইরাস/সিকিউরিটি অ্যাপের সক্রিয় সুরক্ষা ব্যবহার
– রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার ডাউনলোড হওয়া থেকে অনেকাংশে রক্ষা করবে।
৮. রিসেটের আগে ব্যাকআপ
– প্রয়োজন হলে কারখানা সেটিং করুন, তবে সব জরুরি ডেটা ব্যাকআপ করে রাখবেন।
কেন মোবাইল হ্যাকিং থেকে বাঁচা গুরুত্বপূর্ণ?
১. ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা
– ফোনে ছবি, ভিডিও, মেসেজ, পাসওয়ার্ড এমনকি আর্থিক তথ্য থাকে, যা ফাঁস হয়ে গেলে বড় ক্ষতি হতে পারে।
২. আর্থিক নিরাপত্তা
– কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট, এমএফএস (Mobile Financial Service) অ্যাপ – এগুলোর তথ্য চুরি হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।
৩. আইনি ও সামাজিক ঝুঁকি
– আপনার অ্যাকাউন্ট দখল করে কেউ অপরাধ করলে এর আইনি জটিলতা আপনাকেও মোকাবিলা করতে হতে পারে।
৪. মনস্তাত্ত্বিক চাপ
– ব্যক্তিগত কথা বা ছবি ফাঁস হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. পরিবার ও বন্ধুমহলে বিভ্রান্তি
– আপনার পরিচয় দখল করে অন্যকে ক্ষতি করা, বিরোধ তৈরির চেষ্টা করা—এসব ব্যক্তিগত, পারিবারিক, এমনকি পেশাগত সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
কেন মোবাইল হ্যাকিং থেকে বাঁচা গুরুত্বপূর্ণ?
মোবাইল হ্যাকিং কেবল প্রযুক্তিগত সমস্যাই নয়, এটি বড় এক সামাজিক ও ব্যক্তিগত ঝুঁকি। সঠিক জ্ঞান, সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে মোবাইল হ্যাকিং অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিজের ফোনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে পেশাদার সিকিউরিটি এক্সপার্টের পরামর্শ নিন। এই বইটি ক্রয়ের সাথে সাথেই আপনাকে একটি গ্রুপের লিংক দেওয়া হয়েছে সেখানে পোষ্ট করে সহায়তা চাইতে পারেন। পাশাপাশি যদি আপনার বাণিজ্যিক ভাবে পুরো নেটওয়ার্ক এবং আপনার ডিভাইস গুলোর সিকিউরিটি যাচাই করতে চান তাহলে এরিনা ওয়েব সিকিউরিটির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সচেতনতার মাধ্যমেই মোবাইল নিরাপদ ও গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব।
কিভাবে WhatsApp / IMO হ্যাক হয়?
১. ভুয়া পরিচয় বা ভুয়া গল্প
– প্রতারক নিজেকে পুলিশ, ব্যাংক কর্মচারী, সরকারি কর্মকর্তা, কিংবা আপনার পরিচিত বন্ধুর কোনো সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে পরিচয় দেয়। উদাহরণস্বরূপ: “পুলিশ পরিচয়ে” ফোন করে বলবে, “আপনার WhatsApp থেকে সাইবার ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পেয়েছি।”
২. OTP (One-Time Password) নিয়ে প্রতারণা
– হ্যাকার জানে, WhatsApp বা অন্যান্য অ্যাপ পুনরায় লগইন করতে একটি যাচাইকরণ কোড প্রয়োজন হয়। তাই তারা কথা বলে এমনভাবে ভয় বা চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে আপনি ওই কোডটি তাদের দিয়ে দেন।
– আসলে তারা নতুন ডিভাইসে আপনার WhatsApp লগইন করার চেষ্টা করে, ফলে আপনার ফোনে কোড/OTP আসে। সেটি যদি আপনি সরাসরি তাদের জানিয়ে দেন, ওরা আপনার অ্যাকাউন্ট দখল নেবে।
৩. আতঙ্ক বা জরুরি পরিস্থিতি দেখানো
– “আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে”, “দ্রুত কোড না দিলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে”—এরকম কথায় বিশ্বাসযোগ্য একটা ভয় বা তাড়াহুড়োর অবস্থা তৈরি করে। মানুষ ভয় পেলে অনেক সময় যাচাই না করেই কোড বা পাসওয়ার্ড দিয়ে ফেলে।
৪. অ্যাকাউন্ট দখলকরেপ্রতারণা
– OTP পেয়েই প্রতারক আপনার WhatsApp বা IMO-তে লগইন করে ফেলে। এরপর আপনার নাম ও প্রোফাইল ব্যবহার করে বন্ধুদের কাছে জরুরি টাকা চায়, অথবা আপনার পরিচয়ে আপত্তিকর মেসেজ পাঠায়। এভাবে আপনার মানসম্মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি ফোন নম্বর লিস্ট পেয়ে অন্যান্য পরিচিতদেরও বিভ্রান্ত করতে পারে।
কেনো এটা বিপজ্জনক?
  • ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস: আপনার মেসেজ, ছবি, কনট্যাক্ট লিস্ট প্রতারণার কাজে ব্যবহার হতে পারে।
  • আর্থিক ক্ষতি: আপনার পরিচয়ে বন্ধুদের কাছে টাকা চাওয়া হলে বন্ধুরাও প্রতারিত হতে পারে।
  • সম্মানহানি: আপনার সামাজিক ইমেজ নষ্ট হয়, কারণ প্রতারক আপনার অ্যাকাউন্ট দিয়ে অশোভনীয় কাজ করতে পারে।
  • মানসিক চাপ: যে কেউ এমন ঘটনার শিকার হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারেন।
করণীয়
  • OTP বা কোড কখনো শেয়ার করবেন না: বিশ্বের কোনো আসল প্রতিষ্ঠান বা পুলিশ কখনোই OTP বা পাসওয়ার্ড চাইবে না।
  • আসল পরিচয় যাচাই করুন: কেউ পুলিশ পরিচয়ে ফোন করলে, সেটা সত্যি কি না, আলাদা করে থানায় বা সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করে যাচাই করুন।
  • প্যানিক করবেন না: ভয়ের বিষয় বললে কিংবা জরুরি চাপ দিলে প্রথমেই সতর্ক হোন। দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিয়ে কী ঘটছে সেটি ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন।
  • ডাবল-চেক কলার আইডি: পরিচিত নম্বর থাকলেও ভুয়া হতে পারে। বারবার সন্দেহ হলে ব্যক্তিগত ফোন বা অন্য মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করুন।
  • সিকিউরিটি সেটিংস: WhatsApp-এর Two-Step Verification চালু রাখুন, যাতে OTP পেলেও পিন ছাড়া ঢুকতে না পারে।
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতারণা রুখতে সবচেয়ে দরকার সচেতনতা ও সতর্কতা। মনে রাখবেন, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা যতই মজবুত হোক, যদি ব্যবহারকারী নিজেই প্রলুব্ধ হয়ে বা ভয় পেয়ে ভুল তথ্য শেয়ার করেন, তবে হ্যাকারদের হাত থেকে রেহাই নেই। তাই OTP বা সিকিউরিটি কোড কখনো, কোনো অবস্থাতেই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।
পারিবারিক সাইবার সুরক্ষা
পরিবারের সাইবার সুরক্ষায় কিছু নিয়ম নীতিঃ
১. পারিবারিক সাইবার নীতি তৈরি করুন
– ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়, কন্টেন্ট, এবং আচরণ নিয়ে স্পষ্ট নিয়ম ও সীমা নির্ধারণ করুন।
২. পরিবারের সবাইকে সাইবার সচেতন করুন
– পারিবারিক বৈঠকে সবার সামনে অনলাইন ঝুঁকি, আচরণ, ও সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করুন।
৩. পারিবারিক Wi-Fi-তে আলাদা ‘Guest’ নেটওয়ার্ক রাখুন
– অতিথি বা বাইরের কেউ সংযুক্ত হলে পরিবারের ডিভাইস আলাদা সুরক্ষায় থাকবে।
৪. রাউটারের ফায়ারওয়াল সক্রিয় রাখুন
– শুধু ভালো রাউটার কিনলেই হবে না, সেটিংসেও সঠিকভাবে ফায়ারওয়াল কনফিগার করুন।
৫. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
– বয়স অনুযায়ী কনটেন্ট ফিল্টার, অ্যাপ ব্যবহার সময় নির্ধারণ ইত্যাদি সুবিধা পাবেন।
৬. সন্তানদের জন্য আলাদা ইউজার প্রোফাইল তৈরি করুন
– কম্পিউটার/ট্যাবলেটে আলাদা প্রোফাইল দিলে পরিবারের অন্যদের সেটিংস রক্ষা পায়।
৭. স্কুল পর্যায়ের শিশুদের জন্য Kid-Friendly সার্চ ইঞ্জিন
– Google SafeSearch বা শিশুদের জন্য তৈরি সার্চ টুল ব্যবহার করুন।
৮. শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করুন
– পড়াশোনা ও বিনোদনের মধ্যে ভারসাম্য রাখুন।
৯. সন্তানদের সঙ্গে অনলাইনে মিথস্ক্রিয়া করুন
– তারা কী দেখছে, কী শিখছে—সেটা জানতে আলোচনায় বসুন।
১০. শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট মনিটর করুন
– বন্ধুর তালিকা, পোস্ট ও মেসেজে কোনো ক্ষতিকর কিছুর উপস্থিতি আছে কিনা খেয়াল রাখুন।
১১. অনলাইন গেমিং-এর নিয়ম নির্ধারণ করুন
– কোন গেম, কতক্ষণ, কার সঙ্গে খেলবে—এইসব বিষয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিন।
১২. ‘Location Sharing’ অপশন বন্ধ রাখতে বলুন
– বিশেষত শিশু ও কিশোরদের ফোনে লোকেশন শেয়ারিং অফ করে রাখুন।
১৩. পরিবারের সবাইকে অনলাইনে অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা থেকে নিরুৎসাহিত করুন
– অপরিচিত মানুষকে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলুন।
১৪. শিশুদের অনলাইন ব্ল্যাকমেইল সম্পর্কে সতর্ক করুন
– অপরিচিত কেউ অনলাইনে চাপ দিলে যেন সাথে সাথে পরিবারের বড়দের জানায়।
১৫. সাইবার বুলিং নিয়ে আলোচনা করুন
– সন্তানদের বলুন, তারা বুলিং-এর শিকার হলে বা কাউকে বুলিং করতে দেখলে যেন আপনাদের জানায়।
১৬. সহজ ভাষায় ‘ফিশিং’ ও ‘স্ক্যাম’ বোঝান
– পরিবারে সবার বয়স অনুযায়ী উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করুন।
১৭. পরিবারের ডিভাইসগুলোতে ‘Safe Search’ চালু করুন
– যাতে আপত্তিকর কনটেন্ট ভুলেও সামনে না আসে।
১৮. অনলাইন চ্যাটিং প্ল্যাটফর্মগুলো মনিটর করুন
– শিশুরা হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বা অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে কার সঙ্গে কী শেয়ার করছে দেখুন।
১৯. সহপাঠী বা বন্ধুর সঙ্গেও সন্দেহজনক কিছু দেখলে অভিভাবককে জানাতে বলুন
– শিশু যেন বুঝতে শেখে, ক্ষতিকর কিছু শেয়ার বা ঘটনার মুখোমুখি হলে সেটি লুকানো উচিত নয়।
২০. ডিভাইস সবসময় পারিবারিক স্পেসে রাখুন
– ছোটরা যাতে নিজের ঘরে একা বসে স্ক্রিনে ডুবে না থাকে।
২১. অনলাইন স্টোরিং/ক্লাউড শেয়ারিং-এর নিরাপত্তা ঠিক করুন
– পারিবারিক ছবি বা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ক্লাউডে রাখলে সঠিক প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক করুন।
২২. ইন্টারনেট ব্যবহারের পর ডিভাইস লক করতে শিখান
– বাড়িতে ছোট বাচ্চা বা অতিথি থাকলেও যেন অযথা ফাইল বা অ্যাপসে ঢুকতে না পারে।
২৩. পরিবারের সবাইকে ‘ম্যালওয়্যার’ এবং ‘স্পাইওয়্যার’ সম্পর্কে ধারণা দিন
– ‘ফ্রি গিফট’ বা ‘চটকদার অফার’ লিঙ্কে ক্লিকের ঝুঁকি বোঝান।
২৪. ইমেইলে সন্দেহজনক অ্যাটাচমেন্ট খুলতে নিষেধ করুন
– পারিবারিক কম্পিউটারে একবার ভাইরাস ঢুকলে সবার ক্ষতি হতে পারে।
২৫. পরিবারের কম্পিউটার বা ল্যাপটপে স্ক্রিনে পাসকোড বা ইউজার অ্যাকাউন্ট রাখুন
– একই ডিভাইস ব্যবহার করলেও প্রত্যেকের আলাদা প্রোফাইল থাকলে সুরক্ষা বেশি।
২৬. বহিরাগত ডিভাইস (পেনড্রাইভ, হার্ডড্রাইভ) ব্যবহারের নিয়ম করুন
– অতিথি বা পরিচিতদের পেনড্রাইভ ব্যবহারের আগে স্ক্যান করুন।
২৭. অনলাইন কেনাকাটার সময় সবার সামনে সচেতনতা তৈরি করুন
– প্রতিষ্ঠিত ও নিরাপদ ওয়েবসাইট ব্যতীত ট্রানজ্যাকশন এড়িয়ে চলুন।
২৮. কিশোরদের সাথে অনলাইনে অতিরিক্ত টাকা খরচ সংক্রান্ত আলোচনা করুন
– অনলাইন গেম বা অ্যাপ কেনাকাটায় কার্ড সংরক্ষণ না রাখতে বলুন।
২৯. এলডারলি (বয়স্ক) সদস্যদের ‘ফোন কল স্ক্যাম’ সম্পর্কে সচেতন করুন
– ভুয়া কল থেকে ব্যাংক তথ্য, OTP, বা ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হলে যেন না দেন।
৩০. বয়স্কদের জন্য বড় হরফ ও সহজ ব্যবহারযোগ্য সিকিউরিটি সেটিংস অ্যাক্টিভ করুন
– যাতে তারা ভুলে কোনো অপশনে ক্লিক না করে।
৩১. পরিবারের সবাইকে ‘শক্তিশালী’ না হোক, অন্তত ‘ভিন্ন’ পাসকোড দিতে উৎসাহ দিন
– ব্যক্তিগত সাইবার সুরক্ষা বলছি না, কিন্তু পরিবারের প্রত্যেকে যেন একই পাসকোড ব্যবহার না করে।
৩২. একটি নির্দিষ্ট স্থানে ডিভাইস চার্জ ও সংরক্ষণ করুন
– সবার ফোন, ট্যাব এক জায়গায় রাখলে নজর রাখা সহজ হবে।
৩৩. টিভি বা স্ট্রিমিং সার্ভিসে প্যারেন্টাল পিন চালু রাখুন
– বয়স-সীমা বা অবাঞ্ছিত কনটেন্ট ব্লক করুন।
৩৪. অনলাইন ক্লাস বা মিটিংয়ে অ্যাকসেস কন্ট্রোল মেনে চলুন
– বাড়ির অন্যরা যেন তাতে হঠাৎ করে ঢুকতে না পারে এবং ক্লাস টুলে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে রাখুন।
৩৫. শিশুদের ‘আপনি কি ( বয়স ) ১৮+?’ এ ধরনের ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলতে বলুন!
– অনেক ওয়েবসাইট বয়স যাচাই না করেই প্রবেশের সুযোগ দেয়।
৩৬. বাড়ির ছোটরা যেন অনলাইন ফোরাম বা গ্রুপে অজানা লিংক শেয়ার না করে
– ভাইরাস কিংবা স্ক্যাম লিঙ্ক ছড়াতে পারে।
৩৭. ডিভাইস ফেরত বিক্রি বা দান করার আগে কারখানা সেটিং (Factory Reset) করুন
– পারিবারিক ফটো বা ডেটা যেন থেকে না যায়।
৩৮. যে কোনো অ্যাপের পারমিশন একবার দেখে নিন
– পরিবারের যেকোনো ডিভাইসে নতুন অ্যাপ দিলে প্রথমেই চেক করুন।
৩৯. ডিভাইসে ‘Remote Wipe’ বা ‘Find My Device’ সুবিধা চালু রাখুন
– পরিবারের কারো মোবাইল হারালে বা চুরি হলে ডেটা মুছে ফেলতে পারবেন।
৪০. রাউটার বা ইন্টারনেট সংযোগ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন
– তারেরা যেন ইচ্ছেমতো সেটিংস পরিবর্তন করতে না পারে।
৪১. ছোটদের সঙ্গে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য (স্কুল, ফোন নম্বর) না জানানোর অভ্যাস গড়ুন
– অপরিচিতদের সাথে কথায় এই তথ্যগুলো দিতে মানা করুন।
৪২. অজানা অনলাইন চ্যালেঞ্জ বা ট্রেন্ড থেকে সবাইকে সচেতন রাখুন
– টিকটক, ইউটিউব চ্যালেঞ্জে অনেক বিপজ্জনক কার্যকলাপ থাকে।
৪৩. পরিবারে ইমার্জেন্সি সাইবার ঘটনার জন্য যোগাযোগ পরিকল্পনা রাখুন
– কারো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে বা কেউ ভয়ানক হুমকি পেলে কী করবেন তা আগে থেকেই ভেবে রাখুন।
৪৪. সন্তানরা যেন রাতে একা ল্যাপটপ বা মোবাইল নিয়ে না বসে
– প্রয়োজনে ঘুমের আগে ডিভাইস আলাদা জায়গায় রেখে দিন।
৪৫. পরিবারের সবাইকে স্পষ্ট করে বলুন, ব্যক্তিগত ফটো/ভিডিও শেয়ার বড় ঝুঁকি
– ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও অনলাইনে কিছু শেয়ার করলে তা থেকে যায়।
৪৬. বাড়িতে সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা বা বেবি মনিটর থাকলে সেটার সিকিউরিটি আপডেট রাখুন
– এগুলোও অনেক সময় হ্যাকের টার্গেট হয়।
৪৭. বাইরের ডিভাইস বা স্মার্ট টিভিতে নিজের অ্যাকাউন্ট লগইন না করতে বলুন
– ছুটি বা ভ্রমণে গিয়ে স্মার্টটিভিতে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করলে লগআউট করতে ভুলবেন না।
৪৮. পরিবারের সবার ফোনে নির্দিষ্ট ব্লক লিস্ট তৈরি করুন
– স্ক্যাম নম্বর, স্প্যাম কল এগুলো ব্লক করে রাখুন।
৪৯. প্রতিমাসে অন্তত একবার পারিবারিক সাইবার রিভিউ করুন
– সবাই কী শিখলো, কোথাও ঝুঁকি দেখা দিয়েছে কি না—এগুলো আলোচনা করুন।
৫০. ডিভাইস-নির্ভরতা কমাতে অফলাইন পারিবারিক সময় বাড়ান
– পরিবারের সদস্যদের সাইবার জগত থেকে বের করে একসঙ্গে সময় কাটান, যাতে অতিরিক্ত অনলাইন আসক্তি তৈরি না হয়।
বাবা-মা এবং অভিভাবকদের সাইবার সুরক্ষায় করণীয়:
অনেক বাবা-মা বা অভিভাবক প্রযুক্তির বিষয়ে অতটা দক্ষ নাও হতে পারেন। এই অবস্থায় সন্তানদের কিছু সহায়তায় তারা নিজেদের অনলাইন নিরাপত্তা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারেন। নিচে সহজ ভাষায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় দেওয়া হলো:
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করা
  • পাসওয়ার্ডে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্ন (যেমন @, #, $, %) ব্যবহার করুন।
  • পাসওয়ার্ড ছোট বা খুব সহজ (যেমন 123456, password, abc123) রাখবেন না।
  • গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের (ফেসবুক, ই-মেইল, অনলাইন ব্যাংকিং) পাসওয়ার্ডগুলো আলাদা রাখুন।
সন্তানের করণীয়:
  • বাবা-মায়ের জন্য একটি বা দুটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ সম্পর্কে বোঝান।
  • প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড কীভাবে তৈরি করতে হয়, সেটি হাতে-কলমে দেখিয়ে দিন।
দুই ধাপের নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication - 2FA)
  • ফেসবুক, জিমেইল বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ সাইটে 2FA চালু রাখুন, যাতে পাসওয়ার্ড ফাঁস হলেও অন্য কেউ ঢুকতে না পারে।
  • 2FA কোড সাধারণত মোবাইলে মেসেজ বা বিশেষ অ্যাপ (যেমন Google Authenticator, Microsoft Authenticator) দিয়ে আসে।
সন্তানের করণীয়:
  • বাবা-মায়ের অ্যাকাউন্টে 2FA চালু করে দিন।
  • কোডটি কোথায় আসবে, কীভাবে এন্ট্রি করতে হবে—এসব ধাপে সাহায্য করুন।
অচেনা লিংক বা অ্যাপ ডাউনলোড না করা
  • অপরিচিত ব্যক্তির পাঠানো লিংকে ক্লিক করবেন না।
  • ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে সন্দেহজনক লিংক এলে না খুলে প্রথমে সন্তানের বা পরিচিত কারো পরামর্শ নিন।
  • প্লে-স্টোর বা অ্যাপ স্টোর ছাড়া অন্য কোথাও থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা এড়িয়ে চলুন।
সন্তানের করণীয়:
  • বাবা-মাকে দেখান কীভাবে লিংক যাচাই করা যায় (যেমন: URL লক্ষ করা, সন্দেহ হলে গুগলে সার্চ করা)।
  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল না করে কীভাবে মোবাইল পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, সেটিও শিখিয়ে দিন।
স্প্যাম কল ও বার্তা থেকে সতর্ক থাকা
  • ফোনে কেউ ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে PIN বা ওটিপি কোড চাইলে কখনোই দেবেন না।
  • লটারিতে জিতেছেন বা বিরাট পুরস্কার পেয়েছেন—এ ধরনের এসএমএস বা কল আসলে সতর্ক থাকুন, বেশিরভাগই প্রতারণা।
সন্তানের করণীয়:
  • বাবা-মাকে বোঝান, ব্যাংক বা সরকারি দপ্তর কখনোই ফোনে পাসওয়ার্ড বা ওটিপি জিজ্ঞেস করে না।
  • অচেনা কল এলে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার না করার জন্য সতর্ক করুন।
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণে সতর্কতা
  • ফেসবুকে অচেনা বা সন্দেহজনক প্রোফাইল থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলে সাধারণত এড়িয়ে যান।
  • কখনোই ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য (জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নম্বর ইত্যাদি) অজানা মানুষের সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
সন্তানের করণীয়:
  • বাবা-মায়ের ফেসবুক সেটিংস দেখে নিশ্চিত করুন প্রাইভেসি ঠিকঠাক রাখা আছে কি না (যেমন: Friends Only)।
  • বন্ধুতালিকায় সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট থাকলে রিমুভ বা ব্লক করতে সাহায্য করুন।
গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ও ব্রাউজার আপডেট রাখা
  • মোবাইল বা কম্পিউটারে পুরনো অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করলে অনেক সময় সিকিউরিটি দুর্বলতা থেকে যায়।
  • নিয়মিত সফটওয়্যার ও অ্যাপ আপডেট করুন।
সন্তানের করণীয়:
  • অভিভাবকের ফোন বা কম্পিউটারের “Auto Update” চালু করে দিন অথবা সময় মিলিয়ে ম্যানুয়ালি আপডেট করে দিন।
  • পুরনো, অব্যবহৃত অ্যাপগুলো আনইনস্টল করে দিন বা ব্যবহার না করলে বন্ধ করে রাখুন।
সন্দেহজনক কিছু হলে জানান
  • বাবা-মা বা অভিভাবকের যদি সন্দেহ হয় কেউ তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বা আজব মেসেজ পেয়েছে, সাথে সাথে তাদের সন্তানকে বা বিশ্বস্ত কাউকে জানানো উচিত।
  • সময়মতো পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, অ্যাকাউন্ট লগ আউট করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া গেলে বড় ক্ষতি এড়ানো যায়।
সন্তানের করণীয়:
  • বাবা-মা কিছু জানাতে দেরি না করেন, সেটা নিয়ে কথা বলুন।
  • অ্যাকাউন্ট চেক করে প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিন বা সিকিউরিটি সেটিংস আপডেট করে দিন।

ব্যক্তিগত ও ব্যাংক তথ্য সুরক্ষা
  • ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের তথ্য, এমপিন (Mobile Banking PIN), ইন্টারনেট ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না।
  • অনলাইন পেমেন্ট করার সময় ওয়েবসাইট লিংকে “https://” আছে কি না বা নিরাপত্তা চিহ্ন (তালা চিহ্ন) আছে কি না দেখতে হবে।
সন্তানের করণীয়:
  • অনলাইনে কেনাকাটা করার সময় বাবা-মায়ের জন্য সঠিক ওয়েবসাইট যাচাই করে দেবেন।
  • ব্যাংকের পাসওয়ার্ড বা কার্ড তথ্য যেন কোনো অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে সেভ হয়ে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করুন।
বাবা-মা বা অভিভাবকদের সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা বেশ সহজ হতে পারে, যদি সন্তানরা একটু সময় বের করে তাদের সাহায্য করেন। প্রাথমিক কিছু বিষয়ের ওপর যত্নবান হলে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক হলে, তারা নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
একটু সাহায্য ও সচেতনতার মাধ্যমে বাবা-মায়ের ডিজিটাল লাইফ অনেক বেশি সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ কীভাবে কাজ করে?
স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ
– এই অ্যাপগুলো ফোন/ট্যাব/কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে। যেমন, দৈনিক ২ ঘণ্টা বা রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে পারবেন।
ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ফিল্টারিং
– অনুপযুক্ত কনটেন্ট বা ওয়েবসাইট (যেমন পর্নোগ্রাফি, সহিংস কনটেন্ট) ব্লক করতে পারে। একইভাবে, কোন অ্যাপ সন্তান ডাউনলোড বা ব্যবহার করতে পারবে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
লোকেশন ট্রাকিং
– কিছু প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ রিয়েল-টাইমে সন্তানের মোবাইল ফোনের লোকেশন দেখতে দেয়, যাতে অভিভাবকরা জানতে পারেন সন্তান কোথায় আছে।
কল ও মেসেজ নিয়ন্ত্রণ
– অনেক ডিভাইসে অচেনা নম্বর বা স্প্যাম কল ব্লক করার সুবিধা রয়েছে। আবার কিছু অ্যাপ নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের মেসেজ বা কল করার সুযোগ সীমিত রাখার বিকল্পও প্রদান করে।
রিপোর্ট ও অ্যালার্ট সিস্টেম
– শিশু সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে বা নিষিদ্ধ কিছু সার্চ করলে অভিভাবকদের কাছে নোটিফিকেশন বা অ্যালার্ট যেতে পারে।অ্যাক্টিভিটি মনিটরিং
– শিশুর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, ইনস্টল করা অ্যাপ, অনলাইন গেম, ইউটিউব দেখা—এসবের ওপর নজর রাখতে দেয়।
কেনো এটি গুরুত্বপূর্ণ?
  • অনুপযুক্ত কনটেন্ট থেকে সুরক্ষা: ইন্টারনেটে অনেক আপত্তিকর বা বয়স-অনুপযোগী কনটেন্ট রয়েছে। এগুলো থেকে শিশুদের রক্ষা করা জরুরি।
  • সাইবার বুলিং এড়ানো: কেউ যদি অনলাইনে শিশুদের হয়রানি করে, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপের মাধ্যমে সেটার সন্ধান বা সতর্ক সংকেত পাওয়া যায়।
  • অনলাইন আসক্তি রোধ: অতিরিক্ত গেম বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে শিশুদের মধ্যে আসক্তি তৈরি হতে পারে। স্ক্রিন টাইম লিমিট দিয়ে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
  • পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পড়াশোনার সময়: নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারনেট বা গেম ব্লক করে রাখলে, পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ে।
  • মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য: অনলাইন নিরাপত্তা না থাকলে শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুরক্ষা দিলে নিরাপদ ও সুস্থ ডিজিটাল অভিজ্ঞতা সম্ভব হয়।
কিভাবে ব্যবহার করবেন বা কী কী গাইডলাইন মেনে চলবেন
প্রয়োজন বুঝে টুল সিলেক্ট করুন
– অসংখ্য প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ আছে (যেমন Qustodio, Norton Family, Kaspersky Safe Kids, Family Link ইত্যাদি)। নিজের সন্তানের বয়স, ডিভাইস, প্রয়োজনীয়তা—এসব মাথায় রেখে নির্বাচন করুন।
শিশুর সাথে আগে কথা বলুন
– হুট করে ফোনে নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে না দিয়ে, কেন এটি করা জরুরি—তা বোঝান। সন্তানের আস্থা অর্জন ও গোপনীয়তা রক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।
উপযুক্ত সেটিংস নির্বাচন করুন
– বয়স অনুযায়ী ওয়েব ফিল্টার, অ্যাপ পারমিশন, স্ক্রিন টাইম ইত্যাদি কাস্টমাইজ করুন। খুব কড়া নিয়ম শিশুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, আবার অতিরিক্ত শিথিল হলেও কাজ হবে না।
নিয়মিত মনিটর ও আপডেট
– শিশুর বয়স, আগ্রহ ও পড়াশোনার চাপ বদলাতে পারে। সেজন্য প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেটিংস সময়ে সময়ে পর্যালোচনা ও আপডেট করুন।
– অ্যাপ, ডিভাইস ও অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন, যাতে সাইবার সুরক্ষা সর্বোচ্চ থাকে।
সন্তানকে ভালো অনলাইন অভ্যাস শেখান
– গালি বা বাজে মন্তব্য না করা, অপরিচিত লিংকে ক্লিক না করা, ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে শেয়ার না করা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করুন।
বিকল্প বিনোদন বা পড়ার সময় নির্ধারণ
– শুধু অ্যাপ দিয়ে স্ক্রিন টাইম বন্ধ না করে, বিকল্প বিনোদন (বই পড়া, খেলা, সঙ্গীত ইত্যাদি) কিংবা পারিবারিক সময় বাড়িয়ে দিন, যাতে শিশু ইন্টারনেট থেকে আলাদা হয়ে অন্য কাজেও আগ্রহী হয়।
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপের কিছু উদাহরণ
Google Family Link (অ্যান্ড্রয়েড)
– গুগলের নিজস্ব অ্যাপ, যেখানে শিশুদের স্ক্রিন টাইম লিমিট, অ্যাপ ইনস্টল নিয়ন্ত্রণ, অবস্থান দেখা ও স্কুল অ্যাকাউন্ট পরিচালনা সম্ভব।
Apple Screen Time (iOS)
– আইফোন ও আইপ্যাডে বিল্ট-ইন আছে। স্ক্রিন টাইম রিপোর্ট, অ্যাপ ব্যবহারের সময়সীমা, কনটেন্ট ফিল্টার মিলবে।
Qustodio
– বহুল ব্যবহৃত একটি মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম সল্যুশন। ওয়েব ফিল্টার থেকে শুরু করে কল ও মেসেজ মনিটরিং পর্যন্ত বিভিন্ন ফিচার আছে।
Norton Family
– সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি Norton - এর সেবা। শিক্ষা ও মনিটরিং সিস্টেম বেশি ফিচারসমৃদ্ধ।
Kaspersky Safe Kids
– Kaspersky-এর প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সল্যুশন, ওয়েব ফিল্টার, লোকেশন ট্র্যাকিং, স্ক্রিন টাইম লিমিট সহ নানা সুবিধা।
ব্যবহারিক টিপস
  • প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক বা বড় পরিসরে ব্যবহারের ক্ষেত্র: স্কুল বা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • দুটি ডিভাইসে সংযোগ: প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ সাধারণত অভিভাবক ও সন্তানের ফোনে ইনস্টল হয়। একদিকে অভিভাবক মোড, অন্যদিকে শিশু মোড থাকে।
  • গোপন পাসওয়ার্ড ও পিন: প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ নিজেই পাসওয়ার্ড/পিন দিয়ে সুরক্ষিত করুন, যাতে শিশু সেটিংস বদলাতে না পারে।
  • সমন্বয় ও বিশ্লেষণ: সময়ে সময়ে রিপোর্ট দেখে বুঝুন সন্তান কোন সাইটে বেশি সময় দিচ্ছে বা কী খুঁজছে। একতরফাভাবে শাস্তি না দিয়ে সমাধানমুখী আলাপ করুন।
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপের মূল উদ্দেশ্য শিশুকে সম্পূর্ণরূপে “বাধা দেওয়া” নয়, বরং নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করা। অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ শিশুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই সর্বোত্তম উপায় হল—শিশুর সাথে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে এই অ্যাপ ব্যবহার শুরু করা, তার বয়স ও মানসিক পরিপক্কতা অনুযায়ী সেটিংস গড়ে তোলা, এবং নিয়মিত মনিটরের পাশাপাশি বিকল্প স্বাস্থ্যকর বিনোদন ও শিক্ষামূলক সুযোগ সৃষ্টি করা। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ অভিভাবকদের জন্য হবে দারুণ একটি ডিজিটাল সহায়ক, যা শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা রক্ষা ও সুস্থ মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শিশুদের সাইবার সুরক্ষা ও সচেতনতা
বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর যুগে ইন্টারনেট যেমন দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তেমনি শিশুদের জন্যও এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা অনেক কিছু নতুন শিখতে পারে, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারে এবং বিনোদন পেতে পারে। তবে এর সাথে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিও। তাই শিশুদেরকে অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। আসুন জেনে নিই কীভাবে আমরা শিশুদের সাইবার সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি।
কীভাবে অনলাইন ঝুঁকি সম্পর্কে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া যায়?
অনলাইন ঝুঁকি মূলত শিশুদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। এগুলো প্রতিরোধ করার প্রথম ধাপ হলো শিশুদেরকে অনলাইন দুনিয়ায় কী ধরনের বিপদ থাকতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।
ক. বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা রাখুন
  • শিশুদের সাথে ইন্টারনেট নিয়ে নিয়মিত কথা বলুন।
  • তারা কোথায়, কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, কী দেখছে, কাদের সাথে কথা বলছে—এসব বিষয়ে আগ্রহ দেখান।
  • অনলাইনে কোন বিষয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না বা ভয় পাচ্ছে কি না, জানতে চাওয়ার পাশাপাশি সঠিক দিকনির্দেশনা দিন।
খ. বাস্তব উদাহরণ দিন
  • ‘প্রতারণা’ বা ‘সাইবার বুলিং’ এর কেস-স্টাডি বা গল্প বলুন।
  • বাস্তব ঘটনা শুনলে শিশুরা দ্রুত শিখতে পারে।
  • কী করলে বিপদ হতে পারে ও কীভাবে সেগুলো এড়ানো যায়, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন।
গ. নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন তৈরি করুন
  • অনলাইনে কতক্ষণ সময় ব্যয় করবে, কী দেখবে বা কার সাথে যোগাযোগ করবে—এসব বিষয়ে স্পষ্ট নিয়ম থাকলে শিশুদের মনে দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।
  • সঠিক ও ভুল ব্যবহার সম্পর্কে বুঝিয়ে দিন, যেন তারা নিজেরাই ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারে।
অনলাইন অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের ঝুঁকি
অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সাথে শিশুদের যোগাযোগ করাটা সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকগুলোর মধ্যে একটি। অনেক সময় অপরিচিত ব্যক্তি শিশুদের বিপথে নিয়ে যেতে পারে, ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে বা অন্য যেকোনো প্রতারণামূলক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
১. ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা
  • শিশুদের বোঝান যে, নিজের নাম, ঠিকানা, স্কুলের নাম, ফোন নম্বর বা পিতা-মাতার ব্যক্তিগত তথ্য কখনোই অপরিচিত কারো সাথে শেয়ার করা ঠিক নয়।
  • ছবি, ভিডিও কিংবা লোকেশন শেয়ার করাও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
২. বিষয়বস্তু যাচাই
  • অনেক সময় অপরিচিত কেউ বন্ধুত্বের ছলে বা খেলার আমন্ত্রণ দেখিয়ে শিশুদের সাথে যোগাযোগ করে।
  • শিশুদের শেখান, কোনো লিঙ্ক বা ফাইল পাঠালে সেটি কখনোই সরাসরি খুলবে না। আগে বাবা-মা বা অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে।
৩. অনলাইন শিষ্টাচার
  • অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় কিংবা আদৌ কথা বলতে হবে কি না—এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিন।
  • যদি কেউ অশোভন বা হুমকিমূলক আচরণ করে, সাথে সাথে বাবা-মা বা বিশ্বস্ত অভিভাবককে জানাতে বলুন।
শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের নিয়ম
ক. ডিভাইস ও অ্যাপ ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ
  • শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করা ভালো।
  • একটানা অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অনলাইনের পাশাপাশি বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক কাজে শিশুদের যুক্ত রাখুন।
খ. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বা নিরাপত্তা সেটিংস
  • ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেট করুন।
  • ইউটিউব কিডস বা নির্দিষ্ট ব্রাউজিং মোড ব্যবহার করে অশালীন বিষয়বস্তু ব্লক করুন।
  • অ্যাপ ইনস্টল বা গেম ডাউনলোড করার আগে অভিভাবককে জিজ্ঞেস করা বাধ্যতামূলক করুন।
গ. সাইবার বুলিং প্রতিরোধ
  • স্কুল বা পরিচিত গণ্ডির মধ্যে বন্ধুরা যদি অনলাইনে বাজে মন্তব্য করে বা কোনো ছবি শেয়ার করে বিরক্ত করে, শিশুদেরকে বোঝান এটি সাইবার বুলিং।
  • কখনোই পাল্টা খারাপ ভাষা ব্যবহার না করে বাবা-মা বা অভিভাবককে সাথে সাথে জানাতে বলুন।
  • প্রয়োজনে সাইবার বুলিদের ব্লক করুন বা প্রতিবেদন (রিপোর্ট) করুন।
ঘ. ডিভাইস আপডেট ও সুরক্ষা
  • সবসময় ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম ও গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপগুলো আপডেট রাখুন।
  • ভালো অ্যান্টিভাইরাস বা সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
  • পাসওয়ার্ড বা পিন এমনভাবে সিলেক্ট করুন, যাতে সহজে অনুমান করা না যায়।
ঙ. ইতিবাচক অনলাইন আচরণ
  • অনলাইনে অন্যের সাথে যোগাযোগের সময় শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল হতে শেখান।
  • ভুল তথ্য শেয়ার না করা, অন্যকে বিভ্রান্ত না করা এবং ইন্টারনেটকে সঠিক কাজের জন্য ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করুন।
শেষ কথা
শিশুদের সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে আস্থা তৈরি করা। শিশুদেরকে ভয় দেখিয়ে নয়, বরং ভালোবাসা ও যুক্তি দিয়ে বোঝান—কোনটি করা ঠিক এবং কোনটি করা উচিত নয়। অনলাইনে অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার, সঠিক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট নির্বাচন এবং নিয়ন্ত্রিত স্ক্রিনটাইম নির্ধারণ শিশুদের সুরক্ষার পথকে আরও মজবুত করে।
স্মরণ রাখবেন, অনলাইন দুনিয়া যেমন অবারিত সম্ভাবনার জায়গা, তেমনি সতর্ক না থাকলে বিপদ অনিবার্য। তাই শিশুদের অনলাইনে সুরক্ষা বিষয়ে সচেতন করুন, ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন এবং সব সময় পাশে থাকুন। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সবার সচেতন অংশগ্রহণেই গড়ে উঠবে সুরক্ষিত ডিজিটাল ভবিষ্যৎ।
সাইবার বুলিং বা হেনস্তার সম্ভাব্য লক্ষণ
সাইবার বুলিং বা হেনস্তার সম্ভাব্য লক্ষণ
১. আচরণগত পরিবর্তন – আগে উদার ও প্রাণবন্ত স্বভাবের ছিল, এখন হঠাৎ করেই গুটিয়ে নিচ্ছে, বিষণ্ণ বা রাগান্বিত হয়ে পড়ছে।
২. ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা – ফোন, কম্পিউটার, বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, হঠাৎ করেই বারবার নোটিফিকেশন চেক করছে বা পুরোটাই এড়িয়ে যাচ্ছে।
৩. রাতের বেলা বা নির্জনে ডিভাইস ব্যবহার – কেউ না থাকলে বা গভীর রাতে ফোনে চ্যাট করে, কিন্তু পরিবারের কেউ উপস্থিত হলে ফোন লুকায় বা বন্ধ করে রাখে।
৪. রাগ বা ভীতির বহিঃপ্রকাশ – ইন্টারনেট ব্যবহার করার পর হঠাৎ রাগী হয়ে ওঠা বা অল্প কথায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা গেলে সতর্ক হোন।
৫. যে অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করত, সেগুলো এড়িয়ে চলা – কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে প্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া বা গেমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে ফেলতে পারে, বা সেটি ব্যবহার করতে নারাজ।
৬. শারীরিক লক্ষণ – অনিদ্রা, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, অরুচি, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে একাকিত্ব ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।
৭. মেজাজ দ্রুত পরিবর্তন – হঠাৎ আনন্দ, হঠাৎ বিষণ্ণতা, সামান্য ব্যাপারে কান্নাকাটি বা অস্বাভাবিক আবেগপ্রবণ হওয়া।
৮. গোপনীয়তা বৃদ্ধি – আগে অনলাইনে কী করে তা পরিবারকে দেখাত, এখন আর কিছুই শেয়ার করতে চায় না, মোবাইল বা ল্যাপটপ লগইন স্ক্রিন কঠোর গোপনীয়তায় রাখে।
৯. বিভিন্ন অজুহাতে স্কুল বা বন্ধুদের এড়িয়ে চলা – কারো অনলাইন বুলিং স্কুল বা ক্লাসের বন্ধুরা চালিয়ে গেলে অফলাইনে তাদের মুখোমুখি হতে ভয় পায়।
১০. হুমকি বা অপমানজনক মেসেজের আভাস – চ্যাট স্ক্রিন অস্বাভাবিক তৎপরতা, অপরিচিত মেসেজ/কল এড়িয়ে চলা বা এগুলো দেখা মাত্রই ভয় পেয়ে যাওয়া।
সাইবার ব্ল্যাকমেইল বা হেনস্তার বিষয়ে বুঝবেন কীভাবে
১. অপরিচিত বা অচেনা আইডি থেকে ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া
– ছবি, ভিডিও, পাসওয়ার্ড কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে জোর করা।
২. শেয়ার করা ছবি/ভিডিও নিয়ে হুমকি
– কাউকে পাঠানো ছবি অথবা ভিডিও নিয়ে শাস্তি, প্রকাশ, বা সামাজিকভাবে ছোট করার ভয় দেখানো।
৩. টাকা বা অন্য কিছু আদায়ের চেষ্টা
– “তোমার গোপন ছবি ফাঁস করে দেব” ধরনের হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করা, অথবা অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা।
৪. নানা শর্তমূলক ভাষা ব্যবহার
– “এটা না করলে তোমার কথোপকথন সবার সামনে প্রকাশ করবো” এরকম মানসিক চাপে ফেলার চেষ্টা।
৫. তৃতীয় পক্ষের কাছে অশ্লীল ভুয়া তথ্য পাঠানোর ভীতি
– “তোমার বন্ধু/শিক্ষক বা বাবা-মার কাছে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাবো” ধরনের চাপ প্রয়োগ।
৬. বারবার যোগাযোগের চেষ্টা ও পীড়াপীড়ি
– যোগাযোগ না চাইলে “বন্ধু” বা “সহপাঠী” পরিচয় দিয়ে বারবার ফোন/মেসেজ করা কিংবা অন্য আইডি খুলে তাকেই টার্গেট করে পাওয়ার চেষ্টা।
করণীয়
প্রথমিক পর্যায়ে কী করবেন
  • শিশুর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা
    – সন্তানের আস্থা অর্জন করুন, যেন সে প্রতিটি সমস্যা নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারে।
  • শুনুন, বিচার করবেন না
    – শিশুরা অনেক সময় ভয় বা লজ্জায় সত্যি কথা বলতে চায় না। তাঁকে আশ্বাস দিন যে আপনি তার পাশে আছেন এবং কোনো দোষ চাপাতে আসেননি।
  • আতঙ্ক না ছড়িয়ে শান্ত থাকুন
    – আপনি বিচলিত হলে শিশু আরো ভয় পেতে পারে। বরং সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যায় সেটি ভাবুন।
  • প্রয়োজনীয় স্ক্রিনশট ও প্রমাণ সংরক্ষণ করুন
    – মেসেজ, ইমেইল, ছবি, কিংবা ভিডিও প্রমাণ হিসেবে রাখতে পারেন। ভবিষ্যতে আইনগত সহায়তায় কাজে লাগতে পারে।
প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ
  • যে আইডি থেকে বুলিং হচ্ছে, তাকে ব্লক করুন
    – সোশ্যাল মিডিয়া বা মেসেজিং অ্যাপে অপরাধীর অ্যাকাউন্ট ব্লক ও রিপোর্ট করুন।
  • প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন
    – ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক প্রোফাইল ‘পাবলিক’ না রেখে ‘প্রাইভেট’ করে দিন।
  • সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত টুল ব্যবহার
    – পরিবারে যে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বা কন্টেন্ট ফিল্টার আছে, সেগুলো রিভিউ করুন এবং প্রয়োজনীয় সেটিংস আপডেট করুন।
  • নতুন পাসওয়ার্ড বা সিকিউরিটি মেথড যোগ করুন
    – সন্তানের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন ও 2FA (টুফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন) চালু করা যেতে পারে (যদিও এখানে ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়, কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ)।
মনস্তাত্ত্বিক ও আইনি সহায়তা
  • স্কুল কর্তৃপক্ষ বা নিকটস্থ কাউন্সিলরের সাথে কথা বলুন
    – যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সুবিধা থাকে, প্রয়োজনে সেখান থেকে মতামত নিন।
  • বিশেষজ্ঞ মনোবিদ বা সাইবার সুরক্ষা পরামর্শকের শরণাপন্ন হোন
    – দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যার সমাধানে পেশাদার সাহায্য নিতে পারেন।
আইনি সহায়তা নিন
– পরিস্থিতি গুরুতর হলে স্থানীয় পুলিশের সাইবার অপরাধ দপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আইনি সংস্থায় যোগাযোগ করুন। বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত হেল্পলাইনও আছে।
বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের সহযোগিতা
– আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন যে, আপনারা সকলেই তাকে সাপোর্ট করার জন্য ছায়ার মত তার পাশে রয়েছেন। এছাড়া বন্ধুরা অনেক তথ্য ও মানসিক সমর্থন দিতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
পরিবারে সাইবার সচেতনতার চর্চা
– নিয়মিত আলোচনা করুন, যাতে অন্যরা একই ভুল না করে এবং কেউ আক্রমণের শিকার হলে দ্রুত জানাতে পারে।
সন্তানের অনলাইন কার্যকলাপ নজরে রাখুন (বেশি গোয়েন্দাগিরি নয়, কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন)
– শিশুকে স্বাধীনতা দিন, কিন্তু সন্দেহজনক কিছু দেখলে আলাপ করুন।
স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ
– দীর্ঘ সময় অনলাইনে থাকলে নানা বিপদ বাড়ে, তাই ডিভাইস ব্যবহারের নিয়ম ঠিক করুন।
সাইবার বুলিং সম্পর্কে স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা
– শিক্ষক, বন্ধু, কিংবা অভিভাবকদের একযোগে সচেতন হতে হবে।
কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ
  • বাড়ির পরিবেশকে বন্ধুত্বপূর্ণ রাখুন
    – ভয় বা লজ্জায় কেউ যাতে বিষয়টি লুকিয়ে না যায়।
  • মিডিয়া লিটারেসি শেখান
    – কীভাবে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়, অনলাইন কনটেন্ট যাচাই করতে হয়—এগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
  • পরিস্থিতি ভয়ের মনে হলেও বাড়িয়ে তুলবেন না
    – ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ দিন, সবার প্রতি সদয় ও সহযোগী মনোভাব দেখান।
  • নিয়মিত রিভিউ ও চেক-ইন
    – সন্তানের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, তার অনলাইন অগ্রগতির দিকে লক্ষ রাখুন।
সাইবার বুলিং বা সাইবার হেনস্তা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অভিভাবক হিসেবে আগে থেকেই সচেতন থাকলে এবং সন্তানের সাথে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুললে, অনেকাংশে অনলাইন ঝুঁকি ও হয়রানি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। লক্ষণগুলো শুরুতেই চিনে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে পেশাদার, আইনগত ও সামাজিক সহায়তা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবেন না। আপনার সহযোগিতা ও মমতা শিশুকে নিরাপদ ডিজিটাল জগতে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

প্রাতিষ্ঠানিক সাইবার সুরক্ষা
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সাইবার সুরক্ষা আজকের ডিজিটাল যুগে অপরিহার্য। অফিস, স্কুল কিংবা যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের একটা বড় অংশ এখন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। তাই একটিমাত্র সাইবার আক্রমণ বা হ্যাকিং প্রতিষ্ঠানের সুনাম, গ্রাহক আস্থা, এমনকি আর্থিক অবস্থাও ধ্বংস করে দিতে পারে। অনেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান হ্যাক হওয়ার পরে ডাটাবেজ ফাঁস বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হওয়ার কারণেই দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে বা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। গ্রাহকরা আর ফিরে আসেনি, ব্র্যান্ড ভ্যালুও আর তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।
সুতরাং, হ্যাকিং থেকে রক্ষা পাওয়া শুধু আইটি বিভাগের দায়িত্ব নয়—এটা প্রতিষ্ঠানের মালিক থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত সবার সচেতনতার বিষয়। নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:
কেন প্রাতিষ্ঠানিক সাইবার সুরক্ষা জরুরি?
১. গ্রাহকদের আস্থা রক্ষা
– গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বা পেমেন্ট তথ্য ফাঁস হলে তারা ভয় পাবে এবং প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। একবার আস্থা হারালে তা পুনরুদ্ধার করা চরমভাবে কঠিন।
২. ব্র্যান্ড ইমেজ বজায় রাখা
– সাইবার আক্রমণের খবর প্রচারমাধ্যমে এলে মুহূর্তেই প্রতিষ্ঠানের সুনাম পড়ে যায়। ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে বড় ধরনের আর্থিক ও সময় বিনিয়োগ করতে হয়।
৩. আইনি জটিলতা ও আর্থিক ক্ষতি
– ডেটা ব্রিচ হলে গ্রাহক বা বিভিন্ন পক্ষ মামলা করতে পারে। ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম পর্যন্ত হতে পারে।
৪. প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা
– সেফটি ও সিকিউরিটির ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে, ক্রেতারা তাদেরকেই বেশি বিশ্বাস করে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে প্রতিযোগিতায় অগ্রাধিকার পাওয়া যায়।
কী কী করতে হবে নিরাপদ থাকার জন্য?
সাইবার নিরাপত্তা নীতি ও সচেতনতা
  • নীতিমালা তৈরি
    – প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে কীভাবে ডেটা ব্যবস্থাপনা হবে, কে কোন অ্যাক্সেস পাবে—এসব নিয়ে স্পষ্ট লিখিত পলিসি রাখুন।
  • কর্মী প্রশিক্ষণ
    – কর্মীদের সাইবার সুরক্ষা বিষয়ে জ্ঞান বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিশিং, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, ম্যালওয়্যার ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের সচেতন করুন।
  • নিয়মিত কর্মশালা ও আপডেট
    – প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে, হুমকির ধরনও পাল্টাচ্ছে। তাই কর্মশালা, সেমিনার বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখুন যাতে সবার জ্ঞান হালনাগাদ থাকে।
প্রযুক্তিগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
  • ফায়ারওয়াল ও নেটওয়ার্ক সুরক্ষা
    – অফিসের নেটওয়ার্কে শক্তিশালী ফায়ারওয়াল, ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (IDS) ও ইন্ট্রুশন প্রিভেনশন সিস্টেম (IPS) ইত্যাদি স্থাপন করুন।
  • সার্ভার ও ডেটাবেস সিকিউরিটি
    – ডেটাবেসে সংরক্ষণ করা সব তথ্য এনক্রিপশন করে রাখুন। সার্ভারে নিয়মিত প্যাচ ও আপডেট প্রয়োগ করুন।
  • অ্যাক্সেস কন্ট্রোল
    – যিনি যে ডেটার দায়িত্বে, তিনি কেবল সেটাই দেখতে পাবেন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাক্সেস বন্ধ রাখুন।
  • ডেটা ব্যাকআপ ও রিকভারি
    – দৈনিক বা সাপ্তাহিক ব্যাকআপ রাখুন। রানসামওয়ার বা অন্য আক্রমণের শিকার হলে ব্যাকআপ থেকে সিস্টেম পুনরুদ্ধার সহজ হয়।
নিয়মিত নিরাপত্তা যাচাই
  • পেনিট্রেশন টেস্ট & ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট
    – অফিসের সিস্টেমে নিয়মিত পেনিট্রেশন টেস্ট করে দুর্বলতা খুঁজে বের করুন।
  • সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা
    – কর্মীরা কতটা সচেতন, সেটি চেক করার জন্য ফিশিং মেইল বা ভুয়া প্রলোভন দেখিয়ে স্কিল যাচাই করা যেতে পারে।
কর্মীদের সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান কীভাবে বাড়াবেন?
১. প্রশিক্ষণের আয়োজন
– নিয়মিত ভেতরেই ছোট ছোট ওয়ার্কশপ বা সেমিনারের ব্যবস্থা করুন।
২. সনদপত্রমুখী কোর্স
– প্রয়োজনে দেশে-বিদেশে স্বীকৃত কোর্স করিয়ে নিন। কর্মীদের দক্ষতা বাড়লে প্রতিষ্ঠানেরই লাভ।
৩. অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম
– ইউডেমি বা লিংকডইনের মতো প্ল্যাটফর্মে ভালো মানের সাইবার সিকিউরিটি কোর্স পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহারে উৎসাহ দিন।
৪. প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক স্পেশালাইজড প্রশিক্ষণ
– যদি আপনার প্রতিষ্ঠান বিশেষ কোনো সিস্টেম বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে, তাহলে সুনির্দিষ্ট সেই সিস্টেমের সিকিউরিটি দিকগুলো নিয়ে প্রশিক্ষণ দিন।
টিপস: আপনার প্রতিষ্ঠান যেমন সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটির রূপরেখা কর্মচারীদের জানাতে হবে, যেন সবাই বুঝতে পারে কেন এই নিয়ম-কানুনগুলো রাখা হয়েছে।
এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি: সহযোগিতায় আস্থা
আপনার প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ও সম্পূর্ণ সিস্টেম সুরক্ষিত রাখা কিংবা কর্মীদের আধুনিক সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান দিতে চাইলে, বাংলাদেশের প্রথম সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি থেকে সহায়তা নিতে পারেন। এখানে স্বল্পমূল্যে দেশের সেরা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে কোর্স এবং এবং আপনার নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে পুরো সিস্টেম
যাচাই (পেনিট্রেশন টেস্ট, সিকিউরিটি অডিট) করানোর সুযোগ রয়েছে।
এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি থেকে কী কী সেবা পাওয়া যাবে?
  • সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ: কর্মী ও পেশাদারদের জন্য বেসিক থেকে অ্যাডভান্স লেভেলের কোর্স, হাতে-কলমে শেখার সুযোগ।
  • সিকিউরিটি অডিট ও পেনিট্রেশন টেস্টিং: প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, নেটওয়ার্ক ও সার্ভার টেস্ট করে কোথায় দুর্বলতা আছে তা চিহ্নিত করা।
  • আইটি কনসাল্টিং ও সাপোর্ট: কনফিগারেশন, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল, ক্লাউড সিকিউরিটি—সব ক্ষেত্রে পেশাদার পরামর্শ ও বাস্তবায়ন সেবা।
ফলাফল
– আপনার প্রতিষ্ঠান সুরক্ষিত থাকবে, গ্রাহকের আস্থা বাড়বে, আর্থিক ক্ষতি ও ব্র্যান্ড ইমেজের ঝুঁকি কমে আসবে।
সাইবার নিরাপত্তা আপনার প্রতিষ্ঠানকে বাঁচায়
একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাইবার নিরাপত্তা শুধু ‘যথেষ্ট ভালো’ থাকা নয়; এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আধুনিক যুগে হ্যাকাররা সবসময় নতুন নতুন পদ্ধতিতে আক্রমণ করছে। কাজেই সাইবার নিরাপত্তায় একবার মাত্র বিনিয়োগ করে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সুযোগ নেই। বরং নিয়মিত আপডেট, কর্মী প্রশিক্ষণ, অডিট, এবং সঠিক সাইবার সিকিউরিটি পার্টনারের সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।
বড় ধরনের ঝুঁকি যা এড়ানো সম্ভব:
  • ডাটাবেজ ফাঁস, গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি
  • সাইবার হামলার পরিণতিতে আর্থিক এবং আইনি জটিলতা
  • ব্র্যান্ডের অপূরণীয় ক্ষতি ও গ্রাহক হারানো
  • অপারেশনের স্থবিরতা, যা প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা হ্রাস করে
শেষ কথা
প্রতিষ্ঠানকে সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে হলে আজ থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের সব স্তরে সচেতনতা গড়ে তুলুন, কর্মীদের সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিন, এবং নিয়মিত সিস্টেম যাচাই করুন। আর যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো কারিগরি দক্ষতা বা সময়ের অভাব থাকে, তাহলে এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি-র মতো অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে পারেন। কারণ, একটি হ্যাকিং-আক্রমণ যেকোনো সময় আসতে পারে, কিন্তু তার প্রতিরোধ ও মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকলে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকে।
ফেসবুক বিজনেস পেজ ও ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষা
ফেসবুক পেজ সিকিউরিটি


ফেসবুক বিজনেস পেজের সিকিউরিটি কেনো গুরুত্বপূর্ণ?
  • ব্র্যান্ড ইমেজ ও গ্রাহক আস্থা: বিজনেস পেজ সাধারণত প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রের মতো কাজ করে। গ্রাহক ও অনুসারীরা এখান থেকে পণ্য-সেবা সম্পর্কিত তথ্য পায়। পেজ হ্যাক হলে বা স্ক্যাম হলে গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হয়, ব্র্যান্ড ইমেজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • বিক্রয় ও যোগাযোগের মূল কেন্দ্র: অনেক ব্যবসা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রয়/মার্কেটিং পরিচালনা করে। পেজ অকার্যকর হলে বিক্রয় বন্ধ হতে পারে।
  • সময়, অর্থ ও শ্রমের বিনিয়োগ: বছরের পর বছর ধরে তৈরি করা পেজ হঠাৎ হ্যাক হয়ে গেলে পুরো বিনিয়োগ ও পরিশ্রম বিফলে যেতে পারে।
পেজ হ্যাক হলে কী ক্ষতি হতে পারে?
১. পেজ দখল: হ্যাকার এডমিন অ্যাক্সেস নিয়ে মালিককেই রিমুভ করে দিতে পারে, ফলে পেজের ওপর আপনার আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
২. গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা: হ্যাকার আপনার পরিচয়ে গ্রাহকদের কাছে টাকা চাইতে পারে, বা ম্যালওয়্যার লিঙ্ক শেয়ার করে আপনার গ্রাহকদেরও ক্ষতির মুখে ঠেলে দেবে।
৩. ব্র্যান্ড ইমেজ ধ্বংস: আপত্তিকর কনটেন্ট পোস্ট করে ব্যবসার সুনাম ক্ষতি করতে পারে। যা পরবর্তীতে পুনরুদ্ধার করা ভীষণ কঠিন।
৪. বিজ্ঞাপন ও আর্থিক ক্ষতি: আপনার বিজনেস অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত ক্রেডিট কার্ড বা পেমেন্ট পদ্ধতি থেকে প্রচুর পরিমাণে বিজ্ঞাপন খরচ করে যেতে পারে হ্যাকাররা।
কিভাবে হ্যাক হয় বিজনেস পেজ?
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
  • লোভনীয় প্রস্তাব (মাসে মোটা অঙ্কের বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা বলে) দিয়ে বিজনেস ম্যানেজার বা এডমিন রোল নিয়ে নেওয়া।
  • “ফ্রি এড টুলস” ইত্যাদি নামে সফটওয়্যার ডাউনলোড করিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টের সেশন বা পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়।

ফিশিং আক্রমণ : ইমেইল/মেসেজে ভুয়া লিংক পাঠায়, যা দেখতে ফেসবুক লগইনের মতোই। ব্যবহারকারী ভুলে লগইন করলে ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের হাতে যায়।
কুকি বা সেশন টোকেন চুরি : ব্রাউজারে সেভ থাকা সেশন টোকেন পেলে পাসওয়ার্ড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস পায় হ্যাকার।
ভুল পারমিশন সেটআপ : পেজের এডমিন রোল / বিজনেস ম্যানেজারে সবাইকে পূর্ণ অধিকার দিলে যেকেউ অন্যদের রিমুভ করে নিজেই মালিক হয়ে যেতে পারে।
ফেক কপিরাইট ক্লেইম করে কিভাবে স্ক্যামাররা পেজ নষ্ট করে?
১. ভুয়া কপিরাইট নোটিশ
  • “আপনার পেজে কপিরাইটেড কনটেন্ট আছে, লিংকে ক্লিক করে সমাধান করুন” এমন মেসেজ পাঠায়। লিংকটি আসলে ফিশিং সাইট।
  • সেখানে আপনার অ্যাকাউন্ট তথ্য (ইমেইল, পাসওয়ার্ড) চাইবে, বা সেশন টোকেন সংগ্রহ করবে।
২. পেজ ‘ডাউন’ করিয়ে দেওয়া।
আপনার পেজে একাধিক ভুয়া রিপোর্ট জমা দিয়ে অস্থায়ীভাবে পেজ ব্লক করাতে পারে। যখন আপনি “আপিল” করার চেষ্টা করবেন, তখন ভুয়া লিংক বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্ট তথ্য সরবরাহ করে ফেলতে পারেন।
৩. প্রতারণামূলক টুল বা ফর্ম
“ফেসবুক সাপোর্ট সিস্টেম” নামে ভুয়া ওয়েবসাইটে ফর্ম পূরণ করতে বলে (যা ফেসবুকের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই)। আপনার ইমেইল, পাসওয়ার্ড, OTP চেয়ে নিয়ে হ্যাক করে।
কী কী বিষয় নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন?
অ্যাকাউন্ট ও পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা
  • আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে (যেটি পেজের এডমিন) শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, নিয়মিত বদল করুন এবং 2FA চালু রাখুন।
অ্যাডমিন/রোল ম্যানেজমেন্ট
  • অচেনা কিংবা স্বল্প পরিচিত কাউকে এডমিন বা বিজনেস ম্যানেজার রোল দেবেন না। যদি পার্টনারের সাথে কাজও করেন, আগে যথেষ্ট যাচাই করুন। 3. ফিশিং ও ফেক লিংক সচেতনতা
  • কোনো ইমেইল বা মেসেজে “ফেসবুক স্টাফ”, “ফেসবুক পুলিশ” ইত্যাদি পরিচয়ে লিংক পাঠালে ক্লিক করার আগে ডোমেইন যাচাই করুন।
  • ফেসবুকের অফিশিয়াল ডোমেইন ছাড়া অন্য কোথাও (যেমন .tk, .xyz বা আজব ডোমেইন) লগইন পেইজ দেখলে দূরে থাকুন।
অজানা সফটওয়্যার বা এপিআই
  • “ফ্রি বুস্ট” বা “ফ্রি এড ক্রেডিট” নামের যেকোনো টুল ডাউনলোড/ইনস্টল করার আগে যাচাই করুন। অধিকাংশই স্প্যাম/ম্যালওয়্যার হতে পারে।
ভুয়া কপিরাইট ক্লেইম এড়ানো
  • অদ্ভুত ইমেইল বা মেসেঞ্জার থেকে কপিরাইট নোটিশ এলে সরাসরি ফেসবুকের হেল্প সেন্টারে গিয়ে যাচাই করুন। ফেসবুক সাধারণত আপনাকে ইমেইলের বাইরে ফেসবুকের নির্দিষ্ট সাপোর্ট সেকশনেই আপিল করতে বলে।
বেস্ট সিকিউরিটি দিতে কী করতে পারেন?
  • টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA)
  • ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট ও বিজনেস ম্যানেজার অ্যাকাউন্ট দুটোতেই 2FA চালু করুন।
  • শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও পাসওয়ার্ড ম্যানেজার o
  • সহজে অনুমান করা যায় না এমন অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্নের সংমিশ্রণ ব্যবহার করুন।
  • রেগুলার রিভিউ
  • পেজ রোল, বিজনেস ম্যানেজার অ্যাকাউন্ট, এবং “Where You’re Logged In” (অ্যাকাউন্ট সেকশন) নিয়মিত চেক করুন।
  • সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ o
  • পেজ এডমিনদের ফিশিং ইমেইল চেনা, ভুয়া অফার শনাক্ত করা—এসব বিষয়ে ট্রেনিং দিন।
পেজ গুরুত্বপূর্ণ হলে কেন সাইবার নিরাপত্তা শিক্ষা নিতে হবে?
  • অল্প জ্ঞান বা অসচেতনতা: সামান্য ভুল বা অসতর্কতা (ভুল লিংকে ক্লিক, স্ট্রেঞ্জ এডমিন যোগ) পুরো পেজের নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণ হতে পারে।
  • অবিরাম আপডেট: হ্যাকারদের কৌশল প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে, তাই সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে আপডেট থাকতে হবে।
  • প্রাতিষ্ঠানিক দায়: বিজনেস পেজের একটি আক্রমণ শুধু পেজ না, প্রতিষ্ঠানের পুরো সুনাম ও আর্থিক বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা: সাইবার সিকিউরিটি শেখার মাধ্যমে একই ধরনের সমস্যা বা নতুন ভ্যারিয়েন্টের স্ক্যাম প্রতিরোধ করা সহজ হয়।

একটি ফেসবুক বিজনেস পেজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সচেতনতা ও সঠিক নিরাপত্তা সেটআপে। সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফিশিংয়ে ভুলে পা দিলেই বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই শুরু থেকেই 2FA, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, সঠিকভাবে এডমিন রোল পরিচালনা, সন্দেহজনক লিংক-ইমেইলে সতর্ক থাকা, এবং সম্ভাব্য প্রতিটি উপায়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর যেহেতু ডিজিটাল জগতে হ্যাকারদের কৌশল দ্রুত বদলায়, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে এডমিন বা সংশ্লিষ্টদের নিরবচ্ছিন্নভাবে শেখার আগ্রহ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেওয়া অবশ্যই অপরিহার্য।
সাইবার সেফটি গাইডলাইন (সার্বিক)

ব্যক্তিগত সুরক্ষা চেকলিস্ট (Personal Security)
১. পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট
  • শক্তিশালী পাসওয়ার্ড (বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা, স্পেশাল ক্যারেক্টার) ব্যবহার।
  • গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড।
  • পাসওয়ার্ড নিয়মিত বদলানো বা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার।
২. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু
  • ফেসবুক, জিমেইল, ব্যাংক অ্যাপে 2FA সক্রিয় করুন।
  • কোড পাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য ফোন নম্বর বা অথেনটিকেটর অ্যাপ ব্যবহার।
৩. অপরিচিত লিংকে ক্লিক না করা
  • ই-মেইল বা মেসেজে আসা সন্দেহজনক লিংক যাচাই করা।
  • পরিচিত জনের মাধ্যমেও এলে নিশ্চিত হয়ে ক্লিক করা।
৪. ডিভাইস ও সফটওয়্যার আপডেট
  • নিয়মিত অপারেটিং সিস্টেম, অ্যান্টিভাইরাস, অ্যাপ আপডেট করুন।
৫. ওয়াই-ফাই নিরাপত্তা
  • রাউটারে WPA2 বা WPA3 এনক্রিপশন ব্যবহার।
  • রাউটার এর ডিফল্ট পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।
৬. শেয়ার্ড কম্পিউটার ব্যবহারে সতর্কতা
  • পাবলিক ল্যাব বা সাইবার ক্যাফেতে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে লগইন না করা।
  • করলে লগআউট করতে ভুলবেন না।

৭. ব্যাকআপ ও এনক্রিপশন
  • গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ক্লাউড বা অন্য ডিভাইসে ব্যাকআপ রাখুন।
  • প্রয়োজন মতো এনক্রিপশন সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
৮. অজানা ইউএসবি ড্রাইভ এড়িয়ে চলা
  • অপরিচিত ফ্ল্যাশ ড্রাইভ বা স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ফেসবুক / সোশ্যাল মিডিয়া সিকিউরিটি চেকলিস্ট

সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার সেফটি চেকলিস্ট
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও 2FA
২. প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত আপডেট
৩. পরিচিত মানুষ ছাড়া ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট / ফলোয়ার সীমাবদ্ধ
৪. পোস্ট ও কনটেন্ট শেয়ারিং-এ সচেতনতা
৫. স্প্যাম ও ফিশিং লিংক থেকে সাবধান
৬. অ্যাকাউন্ট রিকভারি তথ্য আপডেট ও রিস্টোর সেটআপ
৭. ট্যাগিং অপশন ও ফটো প্রাইভেসি নিয়ন্ত্রণ
৮. নিয়মিত লগইন হিস্টোরি চেক করুন
৯. সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ আপডেট রাখুন
১০. পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ও নির্দিষ্ট ব্রাউজার চেক
পারিবারিক চেকলিস্ট (Family Checklist)
(ক) শিশুদের জন্য নিয়ম (অনলাইন টাইম, কনটেন্ট ফিল্টার)
১. নির্দিষ্ট অনলাইন টাইম সেট করুন
  • শিশুদের জন্য পড়াশোনা ও বিনোদনের বাইরে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম নিরুৎসাহিত করুন।
  • প্রতিদিন বা প্রতি সাপ্তাহিকভাবে সময় বেঁধে দিন (যেমন প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা অনলাইন গেম বা ইউটিউব)।
২. কনটেন্ট ফিল্টারিং / প্যারেন্টাল কন্ট্রোল
  • ব্রাউজারে সেফ সার্চ চালু করুন।
  • অপারেটিং সিস্টেম বা রাউটারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেটআপ রাখুন।
৩. ইনটারনেট ব্যবহারে গাইডলাইন
  • শিশুদের বোঝান, অচেনা লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে ও ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর) শেয়ার না করতে।
৪. পরিচালিত ডিভাইস অ্যাক্সেস
  • ছোট শিশুদের জন্য পরিবারের ডিভাইস মনিটর করে দিন, অযাচিত অ্যাপ বা গেম ইনস্টল করতে দিবেন না।
৫. পর্যবেক্ষণ ও আলাপ
  • শিশু ইন্টারনেটে কী করছে, নিয়মিত আলাপ করুন।
  • সমস্যা হলে (যেমন অশ্লীল কনটেন্ট বা অনলাইন বুলিং) খোলামেলা আলোচনা করতে উৎসাহ দিন।
(খ) বয়স্কদের জন্য পরামর্শ
৬. সহজ ভাষায় প্রযুক্তি বোঝান
  • বাবা-মা বা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ছোট ছোট ধাপে কীভাবে পাসওয়ার্ড তৈরি বা মেসেজ চেক করতে হয়—সাজিয়ে দিন।
৭. সন্দেহজনক লিংক/কল সম্পর্কে সচেতন করা
  • ব্যাংক, এনআইডি বা ব্যক্তিগত তথ্য কেউ ফোনে চাইলে না দেওয়ার নির্দেশনা দিন।
৮. আনঅফিশিয়াল অ্যাপ ইন্সটল না কর
  • প্লে-স্টোর বা অ্যাপ স্টোর ছাড়া অন্য কোথাও থেকে অ্যাপ নামাতে বারণ করুন।
৯. সোশ্যাল মিডিয়া প্রাইভেসি ঠিক রাখা
  • ফেসবুক প্রাইভেসি “Friends Only” করে দেওয়া, প্রোফাইল লক করা, 2FA চালু করা ইত্যাদিতে সাহায্য করুন।
১০. ডিভাইস লক ও পাসওয়ার্ড
  • মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইসে সহজ পাসওয়ার্ডের বদলে অন্তত একটি প্যাটার্ন লক বা পিন লক সেট করে দিন।
  • সম্ভব হলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ফেস আনলক ব্যবহার করতে শিখিয়ে দিন।
প্রাতিষ্ঠানিক সিকিউরিটি চেকলিস্ট (Institutional Security)
১. অফিস নেটওয়ার্ক সুরক্ষা
  • WPA2/WPA3 পাসওয়ার্ডসহ নিরাপদ রাউটার কনফিগারেশন।
  • হোয়াইটলিস্ট বা ফায়ারওয়াল দিয়ে অপ্রয়োজনীয় পোর্ট বন্ধ রাখুন।
২. সিকিউরিটি পলিসি ডকুমেন্ট
  • অফিসিয়াল নীতিমালা তৈরি করুন: কীভাবে পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, ডিভাইস ব্যবহারের নিয়ম, ডেটা শেয়ারিং করতে হবে।
৩. ফাইল শেয়ারিং পলিসি
  • শেয়ারড ড্রাইভে কে কি অ্যাক্সেস পাবে, তার সুস্পষ্ট লিমিটেশন।
  • সেনসিটিভ ডকুমেন্ট এনক্রিপ্ট করে রাখা বা পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড জিপ ফাইল ব্যবহার।
৪. কর্মীদের সচেতনতা ট্রেনিং
  • নিয়মিত ফিশিং, পাসওয়ার্ড সেফটি, সোশ্যাল মিডিয়া রিস্ক সম্পর্কে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিন।
  • প্রয়োজনে প্র্যাকটিক্যাল ডেমো বা সিমুলেটেড ফিশিং ক্যাম্পেইন চালান।
৫. ডিভাইস সিকিউরিটি
  • অফিসে ব্যবহৃত ডেস্কটপ/ল্যাপটপে আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস রাখা।
  • প্রয়োজনে ইউএসবি পোর্ট ব্যবহার সীমিতকরণ বা এনক্রিপ্টেড ইউএসবি ব্যবহারের নিয়ম প্রণয়ন।
৬. অফিস অ্যাকাউন্ট ও লগইন ম্যানেজমেন্ট
  • কর্মচারীদের অফিস ই-মেইলে 2FA বাধ্যতামূলক করা।
  • এক্স-এমপ্লয়িদের (যারা চাকরি ছেড়ে গেছে) অ্যাক্সেস দ্রুত বাতিল করা।
৭. পাবলিক ও প্রাইভেট নেটওয়ার্ক আলাদা রাখা
  • অফিসে গেস্টদের জন্য আলাদা ওয়াই-ফাই (Guest Network) রাখুন, যাতে অফিস ডেটা সুরক্ষিত থাকে।
৮. লগিং ও মনিটরিং
  • সার্ভার, নেটওয়ার্ক ডিভাইস, প্রধান কম্পিউটিং রিসোর্সগুলোতে লগিং চালু রাখুন।
  • সন্দেহজনক কার্যক্রম চিহ্নিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
উপরের চেকলিস্টগুলো প্রতিনিয়ত মেনে চললে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা অনেকাংশেই নিশ্চিত করা যায়। প্রযুক্তির ব্যবহার যতই বেড়ে যাচ্ছে, সচেতন থাকার গুরুত্ব ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিয়মিত আপডেট ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সজাগ থাকলে বড় ধরনের সাইবার ঝুঁকি সহজেই এড়ানো সম্ভব।
৯.৫ কুইজ / সেল্ফ-অ্যাসেসমেন্ট


নিম্নে বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের আলোকে মোট ৫০টি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রতিটি প্রশ্নের মান ২ নম্বর করে (মোট ১০০ নম্বর)।
প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গে চারটি অপশন (ক, খ, গ, ঘ) দেওয়া হয়েছে। আপনি শেষে উত্তর মিলিয়ে নিজের স্কোর গুনে নিতে পারবেন।
৮০ বা তার বেশি পেলে ধরা যায়, আপনি সাইবার নিরাপত্তার বিষয়গুলো বেশ ভালো বুঝেছেন। ৮০-এর কম পেলে বইটির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো আরো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
প্রশ্নমালা (প্রশ্ন ১ - ৫০)
অধ্যায় ২: সাইবার ক্রাইম ও এর প্রয়োজনীয়তা
১. সাইবার ক্রাইম কী?
ক. ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধমূলক কাজ করা
খ. শুধু গেম খেলা
গ. ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া
ঘ. কম্পিউটার চালু রাখা
২. কেনো অনলাইন ব্যবহারকারীদের জন্য সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ?
ক. ইন্টারনেট খরচ কমানোর জন্য
খ. ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য
গ. ফ্রেন্ড লিস্ট বাড়ানোর জন্য
ঘ. ই-মেইল খোলার নিয়ম জানার জন্য
৩. আমরা কোথায় আমাদের তথ্য ফেলে রেখে আসি?
ক. বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল
খ. শুধু অফিসে
গ. শুধু স্কুল-কলেজে
ঘ. কোথাও না
অধ্যায় ৩: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
৪. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি ঘটে এমন সাইবার অপরাধ কোনটি?
ক. স্প্যাম ই-মেইল পাঠানো
খ. অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ব্ল্যাকমেইল, ফিশিং ইত্যাদি
গ. শুধু কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানো
ঘ. কোনো অপরাধ হয় না
৫. বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সহজ টার্গেট কেন?
ক. বেশি প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য
খ. অধিক সাইবার সচেতনতার জন্য
গ. সচেতনতার অভাব ও নিরাপত্তা দুর্বলতার জন্য
ঘ. সুসংগঠিত সাইবার বাহিনীর অভাবে
৬. তরুণদের অনাগ্রহ ও প্রকৃত চ্যালেঞ্জ বলতে কী বোঝায়?
ক. তরুণরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না
খ. তরুণরা সাইবার নিরাপত্তায় উদ্যোগী নয়, ফলে সহজেই সাইবার আক্রমণ সম্ভব
গ. তরুণরা কেবল বিনোদনের জন্য অনলাইন ব্যবহার করে
ঘ. তরুণদের অনেক সুরক্ষিত সিস্টেম রয়েছে
৭. সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তার অবস্থা কেমন?
ক. অত্যন্ত কঠোর ও শক্তিশালী
খ. খুবই নড়বড়ে ও দুর্বল
গ. বিশ্বের সেরা
ঘ. আইন নেই বলে কিছু দরকার নেই
৮. সাধারণ মানুষের সাইবার নিরাপত্তায় অনীহা কেনো ঝুঁকি বাড়ায়?
ক. সবাইখুবসচেতনবলে
খ. তথ্য ফাঁস এবং প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
গ. কোনো ঝুঁকি হয় না
ঘ. টাকা পয়সা লেনদেন হয় না বলে ক্ষতি হয় না
অধ্যায় ৪: হ্যাকিংয়ের সাধারণ পদ্ধতি
৯. হ্যাকাররা সাধারণত কোন পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে?
ক. ফিশিং, ম্যালওয়্যার, কী-লগার, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
খ. শুধু ই-মেইল পাঠানো
গ. কম্পিউটারে গান চালানো
ঘ. ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা
১০. ফিজিক্যাল সেফটি (Physical Safety) বলতে কী বোঝায়?
ক. ডিভাইসের চারপাশে সুন্দর কভার দেওয়া
খ. ডিভাইস হাতে নিয়ে কেউ যাতে হ্যাকিং ডিভাইস (কী-লগার) বা সফটওয়্যার ইনস্টল না করতে পারে, সেটির নিরাপত্তা
গ. অনেক অ্যাপ ইনস্টল রাখা
ঘ. শুধু ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড জানা
অধ্যায় ৫: ব্যক্তিগত সাইবার সুরক্ষা
১১. ব্যক্তিগত সাইবার সুরক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনটি?
ক. সব সময় অনলাইন থাকা
খ. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও 2FA ব্যবহার করা
গ. বন্ধুদের সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করা
ঘ. দ্রুত ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া
১২. মোবাইল হ্যাকিং কী?
ক. মোবাইল হারিয়ে যাওয়া
খ. মোবাইলের সিস্টেম বা অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অন্যজনের অনধিকার প্রবেশ
গ. ফোনে শুধু মেসেজ দেখা
ঘ. ফোন রিস্টার্ট হওয়া
১৩. সাধারণত মোবাইল কীভাবে হ্যাক হয়?
ক. ফিশিং অ্যাপ, সন্দেহজনক লিংক, ম্যালওয়্যার ইনস্টল ইত্যাদির মাধ্যমে
খ. ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখলে
গ. চার্জ শেষ হয়ে গেলে
ঘ. আনইনস্টল করা অ্যাপগুলোর কারণে
১৪. আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে বুঝবেন কীভাবে?
ক. নতুন অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যাওয়া বা ফোনের আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া
খ. ফোনের স্ক্রিন খুব পরিষ্কার দেখানো
গ. ফোন আরও দ্রুত কাজ করা
ঘ. কোনো লক্ষণ থাকে না
১৫. ফোন স্ক্যান করার উদ্দেশ্য কী?
ক. ফোনের প্রোটেক্টর সঠিক আছে কিনা দেখার জন্য
খ. ক্ষতিকর বা সন্দেহজনক ফাইল/অ্যাপ আছে কিনা খুঁজে বের করে নিরাপদ করা
গ. শুধু ফোনের ছবি বের করার জন্য
ঘ. ফোনকে সুন্দর বানানোর জন্য
১৬. আপনার মোবাইল নিরাপত্তায় করণীয় কী?
ক. স্ক্রিন লক, অজানা লিংক বা অ্যাপ এড়ানো, আপডেটেড অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার ব্যবহার
খ. ফোন সারাক্ষণ অফ রাখা
গ. সব অ্যাপ ডিফল্ট পাসওয়ার্ডে রাখা
ঘ. পাসওয়ার্ড কখনো বদলানো যাবে না
১৭. মোবাইল হ্যাকিং থেকে রক্ষা পাওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ক. ব্যক্তিগত ছবি, বার্তা, ব্যাংক অ্যাপ, পাসওয়ার্ড সবকিছু অন্যজনের হাতে চলে যেতে পারে
খ. ফোনের রিংটোন বদলে যেতে পারে
গ. ফোনের গেম ডিলিট হয়ে যেতে পারে
ঘ. ফোনে চার্জ কমে যেতে পারে
১৮. হ্যাকাররা কীভাবে WhatsApp বা IMO অ্যাপ হ্যাক করতে পারে?
ক. আপনার ডিভাইস বা অ্যাপ অ্যাক্সেস পেয়ে, স্পাই অ্যাপ বা ভুয়া লিংক ইত্যাদির মাধ্যমে
খ. ফোন বন্ধ রাখলে
গ. ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে
ঘ. শুধু অফিসে থাকলে
অধ্যায় ৬: পারিবারিক সাইবার সুরক্ষা
১৯. পরিবারের সাইবার সুরক্ষায় প্রথম পদক্ষেপ কী হতে পারে?
ক. সবাই মিলেই পাসওয়ার্ড শেয়ার করা
খ. নিরাপদ পাসওয়ার্ড ও ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা ও নিয়ম তৈরি করা
গ. কারও ডিভাইস অন্যে সবসময় ব্যবহার করা
ঘ. ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়া
২০. বাবা-মা সহ অভিভাবকদের সাইবার সুরক্ষায় করণীয় কী?
ক. সন্দেহজনক কল/লিংকে ক্লিক না করা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, 2FA চালুরাখা
খ. সব সময় গুগল সার্চ করা
গ. মোবাইল প্রায়শই দোকানে ফেলে রেখে আসা
ঘ. অন্যের ডিভাইস নিজের কাছে রেখে দেওয়া
২১. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ কী করে?
ক. শিশুর অনলাইন ব্যবহারের সময় ও কনটেন্ট সীমাবদ্ধ করে, ক্ষতিকর সাইট ব্লক করে
খ. শুধু ব্যাটারি সেভ করে
গ. ফোনকে উল্টো করে রাখে
ঘ. বাবা-মায়ের ফোনের সব তথ্য ডিলিট করে
২২. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ কেনো গুরুত্বপূর্ণ?
ক. শিশুরা যেন আরও বেশি সময় অনলাইন থাকতে পারে
খ. ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে শিশুদের রক্ষা করতে এবং অনলাইন ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ করতে
গ. ফোনের স্ক্রিন আরও উজ্জ্বল করার জন্য
ঘ. টিভি দেখা বন্ধ করার জন্য
২৩. সাইবার বুলিং বা হেনস্তার সম্ভাব্য লক্ষণ কোনটি?
ক. শিশু বা কিশোর/কিশোরীর আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন, অনলাইন মেসেজ পেয়ে ভীত হওয়া
খ. স্কুলে ভালো রেজাল্ট করা
গ. বাসায় ভালো ব্যবহার করা
ঘ. সারাক্ষণ অনলাইনে থাকা কিন্তু কোনো সমস্যা না
২৪. সাইবার ব্ল্যাকমেইল বা হেনস্তার বিষয়টি কীভাবে বুঝবেন?
ক. সন্দেহজনক কেউ আপনার বা পরিবারের ছবি/ভিডিও নিয়ে হুমকি দিচ্ছে বা টাকা দাবি করছে
খ. ফেসবুকে একটা পেজ তৈরি করা
গ. বন্ধুর সঙ্গে গল্প করা
ঘ. অনলাইনে নতুন গান ডাউনলোড করা
অধ্যায় ৭: প্রাতিষ্ঠানিক সাইবার সুরক্ষা
২৫. কেন প্রাতিষ্ঠানিক সাইবার সুরক্ষা জরুরি?
ক. অফিসের ইন্টারনেট স্লো হয়ে যায় বলে
খ. প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও আর্থিক লেনদেন সুরক্ষিত রাখতে
গ. কর্মীদের ছুটি বাড়ানোর জন্য
ঘ. অফিসে কেউ ফোন ব্যবহার না করার জন্য
২৬. প্রতিষ্ঠানেসুরক্ষিতনেটওয়ার্করাখতেকীকরতেহবে?
ক. Wi-Fi পাসওয়ার্ডসবারমাঝেছড়িয়েদেওয়া
খ. WPA2 বা WPA3 এনক্রিপশন, ফায়ারওয়াল ব্যবহার, রাউটারের ডিফল্ট পাসওয়ার্ড বদলে ফেলা
গ. শুধু তারবিহীন (wireless) নেটওয়ার্ক এড়িয়ে চলা
ঘ. কেউ ইন্টারনেট যেন ব্যবহার করতে না পারে
২৭. কর্মীদের সাইবার সিকিউরিটি জ্ঞান বাড়ানোর উপায় কী?
ক. নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সিমুলেটেড ফিশিং ক্যাম্পেইন, সচেতনতা প্রচারণা
খ. অফিসে কোনো কম্পিউটার না রাখা
গ. অফিসে ইন্টারনেট বিল বন্ধ রাখা
ঘ. কেউ কিছু জানে না—এটাই ভালো
২৮. অফিসে ফাইল শেয়ারিং পলিসি কেন দরকার?
ক. যেন সবাই যেকোনো ফাইল ইচ্ছে মতো ডিলিট করতে পারে
খ. সেনসিটিভ ডেটায় নিয়ন্ত্রিত অ্যাক্সেস রেখে ডেটা ফাঁস রোধ করা
গ. সবার পুরনো ফাইল সংরক্ষণ করা
ঘ. ফোল্ডারগুলো খুঁজে পেতে সুবিধা হওয়া
২৯. কর্মীদের সচেতনতা ট্রেনিং কিসের উপর বেশি ফোকাস করে?
ক. ফিশিং ই-মেইল চিনতে শেখা, পাসওয়ার্ড সুরক্ষা, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বুঝতে পারা
খ. কীভাবে নতুন গেম খেলতে হয়
গ. কীভাবে কমপিউটার বন্ধ করতে হয়
ঘ. কপি-পেস্ট করার নিয়ম
অধ্যায় ৮: ফেসবুক বিজনেস পেজ ও ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষা
৩০. ফেসবুক বিজনেস পেজের সিকিউরিটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ক. শুধু লাইক বাড়ানোর জন্য
খ. পেজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ, বিক্রয় ও গ্রাহক তথ্য জড়িত থাকে
গ. পেজ বন্ধ করে রাখার জন্য
ঘ. কোনো কারণ নেই
৩১. ফেসবুক বিজনেস পেজ হ্যাক হলে কী ক্ষতি হতে পারে?
ক. শুধু পেজের নাম বদলে যেতে পারে
খ. আর্থিক ক্ষতি, গ্রাহকের তথ্য ফাঁস, ব্র্যান্ডের সুনাম নষ্ট
গ. সাময়িকভাবে অ্যাডমিন প্যানেল দেখা যাবে না
ঘ. কোনো ক্ষতি হয় না
৩২. কিভাবে সাধারণত বিজনেস পেজ হ্যাক হয়?
ক. ফিশিং লিংক, ম্যালওয়্যার, ভুয়া কপিরাইট ক্লেইম, ইত্যাদি
খ. ফেসবুকে স্ট্যাটাস কম দেওয়ার কারণে
গ. বন্ধুরা পেজ লাইক করে না বলে
ঘ. ফেসবুকের ডিফল্ট সিস্টেম ত্রুটির কারণে
৩৩. ফেক কপিরাইট ক্লেইম করে কীভাবে স্ক্যামাররা পেজ নষ্ট করে?
ক. পোষ্টে ভূয়া রিপোর্ট করে, পেজ নষ্ট করে
খ. ফেসবুকের অফিসে গিয়ে রিপোর্ট করে
গ. ফোনে কল দিয়ে টাকা দাবি করে
ঘ. সরাসরি ফেসবুক অ্যাডমিনকে মেসেজ পাঠায়
৩৪. পেজের সিকিউরিটি বাড়াতে কী করা যেতে পারে?
ক. পাসওয়ার্ড ও 2FA সক্রিয় রাখা, অ্যাডমিন রোল যাচাই করা, সন্দেহজনক লিংক এড়ানো
খ. পেজকে পাবলিক করে রাখা
গ. কোনো অ্যাডমিন না রাখা
ঘ. সবসময় পেজ আনপাবলিশ করে রাখা
৩৫. পেজের জন্য আলাদা মালিকানা ও অ্যাডমিন অ্যাকাউন্ট রাখা কেন ভালো?
ক. পেজ ম্যানেজমেন্ট সহজ হয় এবং ঝুঁকি কমে
খ. পেজে কেউ আর পোস্ট করতে পারবে না
গ. ফেসবুক প্রোফাইল লক হয়ে যায়
ঘ. অপ্রয়োজনীয়
৩৬. পেজ গুরুত্বপূর্ণ হলে কেন সাইবার নিরাপত্তা শিক্ষা নিতে হবে?
ক. বেশি ফলোয়ার পেতে সাহায্য করে
খ. হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি কমায়, আর্থিক ও সুনাম ক্ষতি থেকে রক্ষা করে
গ. শুধু মজা করার জন্য
ঘ. পেজকে অন্য কেউ ব্যবহার না করার জন্য
অধ্যায় ৯: সাইবার সেফটি গাইডলাইন (সার্বিক)
৩৭. ব্যক্তিগত সুরক্ষা চেকলিস্টে কোনটি থাকা উচিত?
ক. সব সময় পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা
খ. পাসওয়ার্ডে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও স্পেশাল ক্যারেক্টার মেশানো
গ. পাসওয়ার্ড সবার মাঝে শেয়ার করা
ঘ. 2FA কখনোই ব্যবহার না করা
৩৮. ডিভাইস আপডেট না রাখলে কী ঝুঁকি হতে পারে?
ক. ফোন বা কম্পিউটার আরও দ্রুত হবে
খ. পুরনো সিকিউরিটি দুর্বলতা থেকে হ্যাকাররা সহজে অ্যাক্সেস নিতে পারে
গ. ইন্টারনেট খরচ বেড়ে যাবে
ঘ. ফোন বন্ধ হবে না
৩৯. ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া সিকিউরিটি চেকলিস্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ কোনটি?
ক. আগেপরেই সব ছবি পাবলিক করে দেওয়া
খ. সন্দেহজনক অ্যাপ পারমিশন নিয়মিত যাচাই করা এবং প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট করা
গ. বছরে একবার ফেসবুক চালানো
ঘ. অতিরিক্ত বন্ধুতালিকা বাড়ানো
৪০. স্ক্যাম লিংক থেকে বাঁচার সহজ উপায় কী?
ক. লিংকে ক্লিক করার আগে URL যাচাই করা, সন্দেহ হলে না খোলা
খ. সব লিংকে ক্লিক করা, তারপর ডিলিট করা
গ. ফোন বন্ধ রাখা
ঘ. লিংকটি কপি করে অন্য বন্ধুদের পাঠিয়ে দেওয়া
৪১. পারিবারিক চেকলিস্টে কোনটি প্রাধান্য পায়?
ক. শিশুদের অনলাইন টাইম ও কনটেন্ট ফিল্টারিং, বয়স্কদের পাসওয়ার্ড সুরক্ষা
খ. সবাইকে সব সাইটে একসঙ্গে অ্যাক্সেস দেওয়া
গ. বাচ্চাদের কোনো নিয়ম না দেওয়া
ঘ. বাবা-মায়ের অ্যাকাউন্ট সবাই মিলে চালানো
৪২. শিশুদের অনলাইন টাইম নির্ধারণের উদ্দেশ্য কী?
ক. ইন্টারনেট বিল কমানো
খ. শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন আসক্তি রোধ করে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়
গ. ইন্টারনেট ধীরগতির জন্য
ঘ. ফোনে চার্জ বাঁচানোর জন্য
৪৩. বয়স্কদের অনলাইনে নিরাপত্তা দিতে কী করতে পারেন?
ক. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করে দিতে সাহায্য করা, সন্দেহজনক কল বা লিংকে সাবধান করা
খ. সব পাসওয়ার্ড এক জায়গায় লিখে রাখা
গ. মোবাইল অনিয়মিতভাবে ফ্যাক্টরি রিসেট করা
ঘ. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সবসময় খোলা রাখা
৪৪. অফিস নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি চেকলিস্টে একটি কী ধাপ?
ক. ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড সবার কাছে উন্মুক্ত রাখা
খ. ফায়ারওয়াল, এনক্রিপশন, রাউটার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা
গ. অ্যান্টি-ভাইরাস ইন্সটল করতে না দেওয়া
ঘ. সবাইকে সারাদিন ভিডিও দেখা বাধ্যতামূলক করা
৪৫. ফাইল শেয়ারিং পলিসি না থাকলে কী ঝুঁকি বাড়ে?
ক. ফাইল খুঁজে পাওয়া সহজ হয়
খ. গোপন ডেটা যে কেউ দেখতে বা ডিলিট করতে পারে
গ. ফাইল আপলোড করার সুযোগ কমে যায়
ঘ. কেউ অফিসে কাজ করবে না
৪৬. কর্মীদের সচেতনতা ট্রেনিং-এর প্রধান লক্ষ্য কী?
ক. কর্মীরা অফিসে গেম খেলতে শিখবে
খ. কেউ যেন হ্যাকারদের ফাঁদে পা না দেয়, পাসওয়ার্ড ও ডেটা সুরক্ষিত রাখে
গ. ইন্টারনেট বিল কমাতে পারবে
ঘ. অফিস বন্ধ রাখবে
৪৭. সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?
ক. ব্যক্তিকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করে গোপন তথ্য আদায় করা
খ. কারখানায় ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য তৈরি করা
গ. সামাজিক কাজে লোকজ ভেতর ঘোরানো
ঘ. শুধুই সফটওয়্যার কোডিং করা
৪৮. অজানা USB বা স্টোরেজ ডিভাইস থেকে কী বিপদ হতে পারে?
ক. ডিভাইস গরম হয়ে যায়
খ. ম্যালওয়্যার ঢুকে যেতে পারে বা ডেটা চুরি হতে পারে
গ. চার্জ বেড়ে যাবে
ঘ. কোনো ক্ষতি হবে না
৪৯. 2FA (টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন) কীভাবে নিরাপত্তা বাড়ায়?
ক. পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি অতিরিক্ত কোড/ডিভাইস যাচাই লাগে
খ. কেবল পাসওয়ার্ড মনে রাখার সহজ উপায়
গ. ইন্টারনেট স্পিড বাড়িয়ে দেয়
ঘ. ফোনের ডেটা ডিলিট করে
৫০. সাইবার সচেতনতার মূলমন্ত্র কী হতে পারে?
ক. “আমাকে কেউ কখনো হ্যাক করতে পারবে না”
খ. “সচেতনতাই সাইবার সুরক্ষার মূল ভিত্তি”
গ. “পাসওয়ার্ড সবার মাঝে বিলিয়ে দাও”
ঘ. “কেবল প্লে-স্টোরে রিভিউ দেখলেই সব নিরাপদ”
উত্তরমালা (প্রতি সঠিক উত্তর = ২ নম্বর)
স্কোর মূল্যায়ন
  • ৮০+ পয়েন্ট (সঠিক উত্তর ≥ ৪০টি): আপনি সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে ভালো ধারণা রাখেন। নিজে, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখতে বেশ ভাল অবস্থানে আছেন।
  • ৮০-এর নিচে পয়েন্ট (সঠিক উত্তর < ৪০টি): বইটির বিভিন্ন অধ্যায় ও টপিক আরো ভালো করে পড়ুন, অনুশীলন করুন। তারপরে আবার চেষ্টা করুন!
সাইবার নিরাপদে থাকুন, অন্যদেরও সচেতন করুন।
উপসংহার ও পরবর্তী করণীয়
সাইবার নিরাপত্তা এখন আর শুধু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় নয়; এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘরে-বাইরে, ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক—সব জায়গাতেই সাইবার সচেতনতার গুরুত্ব অপরিহার্য।
নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে সবার আগে দরকার ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং নিয়মিত চর্চা। সাইবার জগতের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে। ফলে আজ যা শিখছেন, কাল সেটি আর যথেষ্ট নাও হতে পারে। এই বইয়ে উল্লেখিত বিভিন্ন কৌশল ও চেকলিস্ট এক ধরনের প্রাথমিক গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।
পরবর্তী করণীয়
১. নিয়মিত আপডেট থাকা: প্রযুক্তি এবং সাইবার আক্রমণের নতুন কৌশল সম্পর্কে জানার জন্য পেশাদারদের ব্লগ, প্রযুক্তিবিষয়ক নিউজ পোর্টাল ও সাইবার সিকিউরিটি সাময়িকী পড়ে নিজেকে আপডেট রাখুন।
২. সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া: নিজের পরিবার, কর্মক্ষেত্র এবং বন্ধুদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি জানিয়ে দিন। তাঁদের জন্য সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা দিন।
৩. পরীক্ষা ও মূল্যায়ন: আপনার ডিভাইস ও অনলাইন অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা পদ্ধতি সময়ে সময়ে পুনরায় যাচাই করুন। কুইজ বা সেল্ফ-অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে নিজের দুর্বলতা বের করে সমাধান করুন।
ভবিষ্যৎ আপডেট বা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা
সাইবার নিরাপত্তা একটি দ্রুত-বর্ধনশীল ক্ষেত্র। নতুন নতুন হুমকি আসছে, পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত হচ্ছে। এ কারণে ভবিষ্যতে বইয়ের বা গাইডলাইনগুলোর বিভিন্ন অধ্যায় আপডেট করার পরিকল্পনা থাকতে পারে:
  • নতুন হুমকির ধরন: র্যানসমওয়্যার, এডভান্সড ফিশিং টেকনিক, ক্লাউড সিকিউরিটি ঝুঁকি ইত্যাদি ব্যাপারে বিস্তারিত সংযুক্তি।
  • আইনি কাঠামো: বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সাইবার আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং আন্তর্জাতিক আইনের হালনাগাদ তথ্য।
  • IoT (Internet of Things) নিরাপত্তা: স্মার্ট হোম ডিভাইস, স্মার্ট স্পিকারের ঝুঁকি ও করণীয়।
  • ডার্ক ওয়েব সচেতনতা: ডার্ক ওয়েবের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক, ব্যবহার ও নিরাপত্তা।
  • কনটেন্ট ফিল্টারিং ও অ্যাডভান্সড প্যারেন্টাল কন্ট্রোল: শিশুদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তার অতিরিক্ত গাইডলাইন।
আরো শিখার রিসোর্স
বইটি অর্ডার করার সাথে সাথে আপনার লাইব্রেরিতে একটা গ্রুপের লিংক দেওয়া হয়েছে। আপনার অর্ডার আইডি উল্লেখ করে সেখানে জয়েন রিকোয়েস্ট দিলে আপনাকে এড করে নেওয়া হবে। সেখানে আপনি সাইবার সহায়তা, সাইবার আপডেট সহ অনেক বিষয়ে শিখতে এবং জানতে পারবেন।
সাইবার সিকিউরিটি ইথিক্যাল হ্যাকিং কোর্স: এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে অধিকতর গভীরে যেতে চাইলে “ইথিক্যাল হ্যাকিং” ধারণাটি বোঝা জরুরি। কিভাবে হ্যাকাররা কাজ করে, কিভাবে সিস্টেমের দুর্বলতা চিহ্নিত করা যায়—এসব জানা থাকলে উল্টো দিক থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখাও সহজ হয়।
এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে, যেখানে হাতে-কলমে শিখতে পারবেন:
  • ওয়েব সিকিউরিটির মৌলিক বিষয় ও আক্রমণ প্রতিরোধ
  • নেটওয়ার্ক পেনিট্রেশন টেস্টিং
  • মোবাইল অ্যাপ সিকিউরিটি
  • রিয়েল-টাইম হ্যাকিং কেস স্টাডি
  • আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন প্রস্তুতি
এই কোর্সগুলো শিক্ষার্থী এবং পেশাদার উভয়ের জন্যই উপযোগী। যারা শুরু করতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে বেসিক ক্লাস এবং যারা অ্যাডভান্সড কিছু শিখতে চান, তাঁদের জন্যও বিশেষ মডিউল রয়েছে।
অনুপ্রেরণামূলক ও সতর্কতামূলক বার্তা
“আপনার তথ্য, আপনার সম্পদ। এটিকে সুরক্ষিত রাখা আপনার দায়িত্ব।”
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে নিজের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক পরিবেশ এবং পেশাগত ক্ষেত্র—all areas নিরাপদ রাখা। সামান্য একটি ভুলে বড় ক্ষতি হতে পারে, আবার সামান্য সচেতনতা অসংখ্য বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
আজকের বিশ্বে প্রযুক্তিকে অস্বীকার করা চলে না, তাই প্রযুক্তিকে ভালোভাবে বুঝতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন:
  • সচেতনতা মানেই অর্ধেক জয়।
  • নিয়মিত অনুশীলন ও হালনাগাদ জ্ঞান অর্জন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন।
  • অন্যকে সচেতন করুন, নিজেও সচেতন হন।
নিরাপদ সাইবার জীবন গড়ে তুলুন, ডিজিটাল জগতে আপনাকে ও আপনার ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখুন।
এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি
অনলাইন নিরাপত্তা ও ইথিক্যাল হ্যাকিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী—অথবা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে যেকোনো নেটওয়ার্ক ও সিস্টেমের দুর্বলতা যাচাই করতে চান—সব ক্ষেত্রেই এরিনা ওয়েব সিকিউরিটি আপনার পার্টনার হতে পারে।
আমাদের বাণিজ্যিক সেবা সমূহ:

সাইবার সিকিউরিটি ইথিক্যাল হ্যাকিং ট্রেনিং
ক্যারিয়ার সেক্টর, ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন চাকরি বা কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করতে ইচ্ছুকদের জন্য থাকছে হ্যান্ডস-অন ট্রেনিং। মৌলিক থেকে অ্যাডভান্সড লেভেল পর্যন্ত কোর্স মডিউল।

নেটওয়ার্ক ও সিস্টেম দুর্বলতা যাচাই (Penetration Testing)
বাণিজ্যিক যেকোনো নেটওয়ার্ক, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন কিংবা মোবাইল অ্যাপে সার্বিক সিকিউরিটি অডিট। রিপোর্ট ও সমাধানমূলক পরামর্শের মাধ্যমে সিস্টেমকে সুরক্ষিত করা।

অল-ইন-ওয়ান সাইবার সিকিউরিটি সল্যুশন
ছোট থেকে বড় যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনলাইন সিকিউরিটি সেটআপ ও মনিটরিং। o ডেটা এনক্রিপশন, ডিডস প্রটেকশন, ওয়েব সার্ভার সুরক্ষা ইত্যাদি।

অনলাইন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট
আপনার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সুরক্ষিত ওয়েবসাইট, ওয়েব অ্যাপ, ই-কমার্স বা কাস্টম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি ও সাইবার নিরাপত্তার সমন্বয়ে ডিজিটাল সল্যুশন।
আমাদের বৈশিষ্ট্য
  • প্রফেশনাল টিম: দেশসেরা এবং অভিজ্ঞ সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও ইথিক্যাল হ্যাকারদের দ্বারা পরিচালিত।
  • আপ-টু-ডেট নলেজ: সর্বশেষ সাইবার আক্রমণের পদ্ধতি ও প্রতিরক্ষামূলক কৌশল নিয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ।
  • ক্লায়েন্ট-কেন্দ্রিক: সেবাদানের পুরো প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  • সাপোর্ট ও পরামর্শ: কোর্সের শিক্ষার্থী হোক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক—সবাইকে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়।
যোগাযোগের ঠিকানা
  • ঠিকানা: বাসাঃ ১, ব্লক: বি, প্রধান সড়ক, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা ১২১৯
  • হটলাইন: +8801310333444 (WhatsApp এর মাধ্যমেও যোগাযোগ করে নিতে পারেন।)
আপনি যদি সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান বা আপনার অনলাইন সিস্টেমকে নিরাপদ রাখতে চান, তাহলে এরিনা ওয়েব সিকিউরিটির পেশাদার সেবাসমূহ আপনার পাশে থাকবে। সাইবার বিশ্বে নিরাপদে এগিয়ে যান—আমরা আছি আপনার সাথে।